বিনোদ বিহারী (১৯১১–২০১৩)। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। আজীবন তিনি ছিলেন সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব, সদা সত্যবাদী, অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়নিষ্ঠ এবং বিবেকের কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে এক মহৎ মানুষ, চির বিপ্লবী। তাঁর নামের সঙ্গে ‘বিপ্লবী’ বিশেষণটা একাকার হয়ে গিয়েছিল। নিতান্ত সাদামাটা জীবনযাপন করেও কীভাবে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায় তারই এক বিরল দৃষ্টান্ত বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। বিনোদ বিহারীর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার উত্তর ভূর্ষি গ্রামে। ১৯২৯ সালে সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন। লাভ করেন রায় বাহাদুর বৃত্তি। স্কুল জীবনেই বিপ্লবী যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত হন।
এসময় তিনি সংস্পর্শে আসেন মাস্টারদা সূর্য সেনের এবং সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়ে মাস্টারদার বিপ্লবী বাহিনী ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে অনেক বীর বিপ্লবী শহীদ হন। বিনোদ বিহারীর কণ্ঠনালীতে গুলি লাগে। ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বন্দী অবস্থায় ১৯৩৪ সালে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৩৬ সালে ডিস্টিংশনসহ বি.এ পাস করেন। ইংরেজ সরকার কর্তৃক গৃহবন্দী অবস্থায় ১৯৩৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ ও বি.এল পাস করেন। সে বছর গৃহবন্দীত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘পাঞ্চজন্য’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হন এবং শুরু করেন সক্রিয় রাজনীতি চর্চা। ১৯৪১ সালে আবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ৪৬–এ মুক্তি পেয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এই তিন পর্বে যত অন্যায়, অপশাসন ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটেছে সবটাতেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার, লড়াকু সৈনিক। কর্মকৃর্তীর স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ রাষ্ট্রীয় নানা সম্মাননা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সংবর্ধনা লাভ করেন । ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।