বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, বিডা ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু করেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি স্বল্পসময়েই অল্প খরচে এই অনলাইন সেবা নিতে পারবেন। কোনো তৃতীয় পক্ষের কাছে না গিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে সরাসরি বিডার ওএসএসের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এতে সময়ের পাশাপাশি কমবে খরচও।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর হোটেল আগ্রাবাদে বিডার ওএসএস পোর্টালের সার্বিক কার্যক্রম অবহিতকরণ সম্পর্কিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম প্রধান উপদান হলো আধুনিক বিনিয়োগ ব্যবস্থা। আর বিনিয়োগ সেবাকে আরো আধুনিক করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিডা। স্বল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে, স্বচ্ছ–দ্রুত ও ঝামেলাহীন স্মার্ট বিনিয়োগ সেবা নিতে হলে বিডার ওএসএস ব্যবহার করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের বিশ্বমানের ডিজিটাল সেবা দিতেই ওএসএস। শুরুতে এটা ব্যবহার করতে গিয়ে কেউ কেউ হয়ত পদ্ধতিগত সমস্যায় পড়ছেন। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমাদের কাছে আসবেন।
মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সেবা অনুমোদনের জন্যও আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) ওএসএস ব্যবহার করা উচিত। এতে কোনো সমস্যা হলে আমরা সহযোগিতা করতে পারব। ওএসএস এর মাধ্যমে আপনারা সেবা নিলে সেবা সংস্থাগুলোর উপর আমাদের একটা কন্ট্রোল আসে। আমাদের মাধ্যমে না গেলে সেটা হবে না। এছাড়া অনলাইনে আবেদনের পরও চারবার কাগজপত্র দেওয়ার যে সুযোগ এখন আছে, আগামী তিনমাসের মধ্যে তা কমিয়ে দুইবারে আনা হবে। নতুন বলে এখনই সেটা করছি না। অল্প সময়ের মধ্যেই করা হবে। আবেদনের পর আর একবার কাগজ জমা দিবেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিডা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে কীভাবে অনলাইনে সেবা প্রদান ব্যবস্থা আপডেট করা যায়। কিন্তু বিডা অনুমোদন দেওয়ার পরও অন্য রেগুলেটরি বডি কেন দেওয়া না? এখানে বিডার একটা সমন্বয়ক অথরিটি থাকা প্রয়োজন। আমরা অনেক ব্যবসায়ীকে জানি, যাদের মেশিনারি হয়ত এসে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমতি পায় তো গ্যাসের পাচ্ছে না। নয়ত পরিবেশের অনুমোদন পাচ্ছে না। আমরা যারা ব্যবসা করি, তারা ব্যাংকের লোন নিয়ে মেশিনারি আনি। একটা সার্টিফিকেটের জন্য ব্যবসা শুরু করতে পারছে না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের হয়ত অনেক লোকবল আছে, সক্ষমতা আছে। তারা এসব অনুমোদনের জন্য লেগে থাকতে পারে। কিন্তু মাঝারি বা নতুন উদ্যোক্তারা থার্ড পার্টি নির্ভর হয়ে পড়ছে এসব অনুমোদনের জন্য।
বিডার নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) ড. খন্দকার আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সময় সেবাসমূহ হবে স্মার্ট। বিডার অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা সবধরনের বিনিয়োগ সেবা ঘরে বসেই একই প্লাটফর্ম থেকে পাবেন, এমনকি অফিসে আসারও প্রয়োজন নাই।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান (এনডিসি) বলেন, চমৎকারভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বিডা। বাংলাদেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিডার কার্যক্রম খুবই গতিশীল। বিডার ওএসএস বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ ডিজিটাল বিনিয়োগ সেবা প্রদান করে আসছে। তাই বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রেও আমাদের প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন চেম্বার্স অব কমার্সের প্রতিনিধি ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময়, সুপারিশ গ্রহণ ও মুক্ত আলোচনা হয়। বিডার সহকারী পরিচালক আবু জার গিফারী তমালের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ওএসএস সেবার হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরেন বিডার মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায়। এছাড়া বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ–সভাপতি সৈয়দ মো. তানভীর, চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আবিদা সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান, বিডার চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ও আইএলও বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার মো. বোরহান উদ্দিন।
কর্মশালায় জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনলাইন ভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টাল চালু করে বিডা। বর্তমানে ২৪টি সংস্থার ৭১টি সেবা প্রদান করছে। এছাড়া ৪৩টি সংস্থার সাথে সমঝোতা স্মারক সই করেছে সংস্থাটি। শিগগিরই এসব সংস্থার সেবাসমূহ বিডা ওএসএসে যুক্ত হবে। ওএসএস পোর্টালের আওতায় বিভিন্ন সংস্থার ১৫০টির অধিক সেবা অনলাইনে দেয়ার পরিকল্পনা আছে বিডার।