বিনিয়োগ ক্ষেত্রে দ্রুত দূর করতে হবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা

| শনিবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। এটি অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভর করে শিল্পের উন্নয়নের ওপর। দেশের শিল্প উন্নত ও আধুনিক না হলে যেকোনো দেশই অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশের জন্য এই সত্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশ এখন শিল্পে অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে দেশের শিল্প বিকশিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও জোয়ার আসবে। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা কঠিন হবে না। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, উচ্চ সুদের হার, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা, বিদ্যুৎজ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা চলছে। এর ফলে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। আর তলানিতে এসে ঠেকেছে শিল্পোৎপাদন। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় তরুণদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির চাহিদার মধ্যে নানামুখী সংকটে জর্জরিত উদ্যোক্তারা। সময়মতো এলসি করতে না পারা, জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে কারখানার উৎপাদন নেমেছে শূন্যের কোঠায়। কারখানায় বিক্ষোভ, হামলামামলার কারণে ভারী শিল্প, পোশাক ও টেক্সটাইল খাত মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে। অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

গত ২ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘শিল্পখাতে কমেছে বিনিয়োগ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে শিল্পখাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। বিদ্যমান শিল্প কারখানার সমপ্রসারণ কিংবা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার হার তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের সংকট, অস্থিতিশীলতা, সরকার পতনের পর অর্থশালীদের অনেকেই পালিয়ে যাওয়া, ব্যাংক খাতের দৈন্যদশায় অর্থায়নে কড়াকড়িসহ নানা কারণে দেশে শিল্পখাতে বিনিয়োগ কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে শিল্পে বিনিয়োগ ২৬ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। এতে করে শিল্প উৎপাদন এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান খাতে ইতিবাচক আবহ বিরাজ করে। নতুন নতুন শিল্পে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু বিনিয়োগে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এতে করে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে মন্দা বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য মতে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে দেশে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৯৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের। এসব যন্ত্রপাতি বিভিন্ন নতুন কলকারখানা স্থাপন এবং পুরানো কলকারখানার সমপ্রসারণে ব্যবহৃত হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৭১ কোটি ২৬ লাখ ডলারের। অর্থাৎ চলতি বছরে এলসি খোলার পরিমাণ ২৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ২৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে গেছে। এ ছাড়া আগের বছরের ৫ মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ১১০ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। চলতি বছরে যা ৮৬ কোটি ৪৭ লাখ ডলারে নেমেছে। এক্ষেত্রে ২৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার বা ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ এলসি নিষ্পত্তির হার কমে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের শিল্প খাত পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর একটি খাত। দেশিবিদেশি বিনিয়োগ ব্যতীত এ খাতের উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কঠিন। বিগত সরকারের আমলে দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, ঋণখেলাপি, রিজার্ভ সংকট ও বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এগুলো অর্থনীতিতে এক ধরনের স্থবির পরিবেশ তৈরি করে। ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যক্তি খাত বিনিয়োগবঞ্চিত হয়। পর্যাপ্ত গ্যাসবিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় তখন উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিল্প খাতসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক হয় নিম্নমুখী। এ পরিস্থিতি দেশিবিদেশি বিনিয়োগে তৈরি করে প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে বাড়েনি শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান।

তাঁরা বলেন, স্বাভাবিকভাবে দেশে বিনিয়োগ বাড়লে অর্থনীতিতে গতিশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়ে। এ জন্য বিনিয়োগে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলোকে দ্রুত দূর করে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকারকেই ভূমিকা নিতে হবে। শুধু একদুটি পদক্ষেপ নিলেই হবে না। সামগ্রিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে