ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। গর্ভবর্তী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি (বিনা অস্ত্রোপচারে) করে সেরকমই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসরা। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ প্রসূতির নরমাল ডেলিভারিতে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। প্রতিটি শিশু এবং শিশুর মা সুস্থ আছেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তাদের এই উদ্যোগ নজির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফলতা লাভ করায় এটি চট্টগ্রাম জেলার মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের তত্ত্বাবধানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সালাউদ্দিন, ডা. রাশেদা পারভীন, ডা. জুয়াইরিয়া বন্যা, মিডওয়াইফ রাফিন, সিনিয়র স্টাফ নার্স মায়া রানী, সুপারভাইজার হোসনেয়ারা বেগম, সিনিয়র স্টাফ নার্স সুমিত্রা, নার্সিং ইনচার্জ ইন্দিরা মিলে টিম ওয়ার্কের কারণে নরমাল ডেলিভারিতে আমরা সফল হয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন রাশেদ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এ পর্যন্ত শতাধিক নরমাল ডেলিভারি করেন সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ। গত জুলাই মাসে একদিনে ১৯ প্রসূতির শিশু জন্মগ্রহণ করে। নরমাল ডেরিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যান–মেম্বার, ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সিলিং প্রদান করেন।
প্রসূতি মায়েরা জানান, দেরি করে সন্তান নেয়ায় ও এলাকার কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী এবং চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। এখানে নরমাল ডেলিভারিতে আমাদের সন্তান সুস্থভাবে জন্মলাভ করেছে।
ডা. মো. নুর উদ্দিন রাশেদ আরো জানান, ডেলিভারি হওয়ার পর জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামা–কাপড়, মশারি ওই শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না। পাশাপাশি কোনো প্রকার খরচ করতে হয় না রোগীর স্বজনদের।