বিনামূল্যে ২২ কোটি টাকার জিন থেরাপি পেল শিশু

| বুধবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কোনো শিশুর ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি’ বা এসএমএ নামের রোগটি ধরা পড়লে এতদিন দেশের চিকিৎসকেরা ধরেই নিতেন, তাকে সুস্থ করার কোনো রাস্তা নেই। সেই ধারণায় পরিবর্তনের আশা জাগাচ্ছে জিন থেরাপি।
ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সে হাসপাতালে প্রথমবারের মত এসএমএ আক্রান্ত একটি শিশুকে ‘জিন থেরাপি’ দেওয়া হয়েছে, যদিও এর ব্যয় এখনও সাধারণের নাগালের বাইরে। একটি মাত্র ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া ওই থেরাপির প্রতি ডোজের বাজারমূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা (২২ লাখ ডলার)। ওষুধ প্রস্তুতকারী বহুজাতিক কোম্পানি নোভারটিস বিনামূল্যে দেশের দরিদ্র একটি শিশুর জন্য ওই ডোজটি সরবরাহ করেছে। খবর বিডিনিউজের।
দেশে স্নায়ুতন্ত্রের চিকিৎসায় এ ঘটনাকে একটি মাইলফলক বলছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্স জোবাইদা পারভীনের নেতৃত্বে একটি দল শিশুটিকে জিন থেরাপি দেওয়ার জন্য শনাক্ত ও প্রস্তুত করেন। চিকিৎসক জোবাইদা পারভীন বলেন, এসএমএ একটি বিরল ও জটিল স্নায়ুতন্ত্রের জন্মগত রোগ, যা জিনগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। ২০২১ সালে হাসপাতালে তারা ৩০টি শিশু রোগীকে এসএমএ আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ জিনের কারণে এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের স্পাইনাল কর্ডের স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যায়। যেসব স্নায়ুকোষ মাংসপেশী নিয়ন্ত্রণ করে, সেই স্নায়ুকোষগুলো নষ্ট হওয়ার কারণে মাংসপেশী ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে। যার ফলে এ সকল শিশু বসতে, দাঁড়াতে এমনকি কেউ মাথা তুলতেও পারে না। তবে তাদের বুদ্ধিমত্তা ঠিক থাকে। পরবর্তীতে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা মারা যায়।
ডা. জোবাইদা পারভীন বলেন, এসব রোগীকে সুস্থ করে তুলতে ত্রুটিপূর্ণ জিনের জায়গায় ত্রুটিমুক্ত জিন প্রতিস্থাপন করা হয়। শরীরের গঠন অনুযায়ী এক ধরনের ভাইরাসকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করে ত্রুটিমুক্ত জিন রোগীর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে ঢোকানো হয়। পরে ভাইরাসের মাধ্যমে জিনটি শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মাংসপেশীর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
অনুষ্ঠানে নোভারটিস বাংলাদেশের প্রধান রিয়াদ মামুন প্রধানী বলেন, ওষুধটি প্রত্যেক রোগীর জিন গত বৈশিষ্ট্য এবং আরও নানারকম শারীরিক বিষয় যাচাই বাছাই করে প্রস্তুত করা হয়। এটা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া, তাই এর চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৩০০ রোগী এই ওষুধটি পেয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিত্রাং কেড়ে নিল ২৬ প্রাণ
পরবর্তী নিবন্ধরাসমণি ঘাটে হাহাকার