বিনামূল্যে সরকারি বাড়ি গৃহহীনদের আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

ঈদ উপহার হিসেবে আরো ১৮,৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর

| বুধবার , ১২ জুন, ২০২৪ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে দেওয়া বাড়িগুলো গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান করে পুনর্বাসন করেছি। এতে তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ ফিরে এসেছে। একটি দেশকে উন্নত করতে হলে এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তাঁর সরকারের সারাদেশের গৃহহীনদের বিনামূল্যে ঘর দেওয়ার জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে ভাষণে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঈদ উপহার হিসেবে এসব ঘরগুলো দিয়েছি। সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশবাসীর সেবা করা। কারণ, দেশের জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা থাকায় তারা বার বার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এককভাবে ২৩৩টি আসন প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিল আমাদের ওপর। কাজেই যে মানুষগুলো আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে তাদের সেবা করাই আমাদের দায়িত্ব। সরকার প্রধান বলেন, ঠিক আমার বাবা যেভাবে নিজেকে বাংলাদেশের জনগণের সেবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেভাবেই তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের মানুষের সেবা করাকেই আমি কর্তব্য বলে মনে করি। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত এই বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না। এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। এদেশের মানুষ ক্ষুধাদারিদ্র থেকে মুক্তি পাবে। প্রত্যেকটি মানুষের জীবন সুন্দর হবেসেটাই আমাদের লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে যে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস (রেমাল) হয়ে গেল সেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমেধ্যেই আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। কতগুলো আংশিক বিধস্ত হয়েছে। যেগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আর ক্ষতিগ্রস্তদেরও আমরা ঘর পুনর্নিমাণে সহায়তা করবো। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা করে যাচ্ছি এবং ঘরবাড়ি যাদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমি তাদের এটুকু বলতে চাই, আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। প্রত্যেকেই নতুন ঘর যাতে পান, সেই ব্যবস্থা ইনশাল্লাহ আমি করে দেব এবং সেভাবেই আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রত্যেক এলাকা থেকেই আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং সে অনুযায়ী আমরা এই সহায়তা পাঠাব।

শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের মাঝে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন তিনি। পরে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।

আশ্রয়ণ২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে গতকাল ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করেন। নতুন ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারাদেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮টি এবং উপজেলা হয়েছে ৪৬৪টি।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আশ্রয়ণ২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি এবং চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে দুই দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধাপাকা বাড়ি দেয়া হচ্ছে, যা স্বামীস্ত্রী উভয়েরই নামে হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, আমার দেশের যারা ভূমিহীনগৃহহীন আছে, তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়ের ব্যবস্থা, জীবনজীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ফলে তাদের জীবন বদলে গেছে। এই সময় তিনি ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ এবং প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। আর সে কারণেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। ঘরগুলো নির্মাণের কাজে জড়িতদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর এবং জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল, চীনের ঐতিহ্যের রূপ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা