বিনামূল্যের সোলারের জন্য নাম তোলার নামে অর্থ আদায়

সাড়ে ৯শ সোলারের বিপরীতে ৩০ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগ মানিকছড়ির বাটনাতলী ইউনিয়নে বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৪ মে, ২০২৩ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিনামূল্যে সোলার প্যানেল দেওয়ার কথা থাকলেও উপকারভোগীদের কাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির বাটনাতলী ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অন্তত ৩০ লাখ টাকা আদায় করেছে একটি চক্র। বিষয়টি জানতে পেরে সোলার বিতরণ স্থগিত রেখেছে উন্নয়ন বোর্ড।

বিতরণের জন্য আনা সোলার প্যানেল ছদুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে। জানা যায়, সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডে ৬৪টি, ২নং ওয়ার্ডে ১৩৯টি, ৩নং ওয়ার্ডে ১৬৯টি, ৭নং ওয়ার্ডে ২৮৩টি, ৮নং ওয়ার্ডে ২৪৫টি, ৯নং ওয়ার্ডে ৫৪টি সোলার প্যানেল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে বরাদ্দ পায়। বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করে। এসব সোলার প্যানেল দেওয়ার জন্য অফিস খরচের নামে উপকারভোগীদের কাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মানিক ত্রিপুরাসহ একাধিক ইউপি সদস্য এর সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোলার প্যানেলে নাম তালিকাভুক্তির বিনিময়ে তিন হাজার টাকা ইউপি সদস্য মানিক ত্রিপুরাকে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন ছদুরখীলের বাসিন্দা মো. আমির আলী। একই এলাকার বাসিন্দা তানিমং মারমা, অংশেপ্রু মারমা ও পাইতু মারমাও জানান, সোলার প্যানেল দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকেও তিন হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে।

সরেজমিন ছদুরখীলে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা বজলু মিঞা বলেন, আমার বড় ছেলে সোলারের জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছে। ছোট ছেলে ১ হাজার টাকা, আর আমি দিয়েছি ৮শ টাকা। তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য এ টাকা দিতে হয়েছে।

গত ২১ মার্চ মানিকছড়ির ছদুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সোলার বিতরণের জন্য আসেন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। সোলার প্যানেল বিতরণের জন্য অর্থ আদায়ের বিষয়টি জানার পর তিনি বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করে চলে যান । নতুন করে তালিকা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দেন।

সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য বিলকিস আক্তার বলেন, সোলার বিতরণের জন্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আসলেও অনিয়মের বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সোলার বিতরণ না করে চলে যান।

৫নং ওয়ার্ডের সদস্য অংগ জাই মারমা জানান, দুর্গম এলাকায় সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেয় উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পরিষদের মেম্বারদের দুর্নীতির কারণে সোলার বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। সোলার দেওয়ার কথা বলে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে।

তবে ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক ত্রিপুরা বলেন, আমার বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বাটনাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের সোলার বিতরণ প্রকল্পে যে অনিয়ম হয়েছে সেটার সাথে আমি এবং ইউপি সদস্যরা জড়িত না।

মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, সোলার বিতরণে অনিয়ম হওয়ার কারণে নতুন করে তালিকা করার জন্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্দেশ দিয়েছে। এই বিষয়ে জানতে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা এবং প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদকে একাধিকার কল ও খুদে বার্তা দেওয়ার পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীতে আবারো ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি শুরু
পরবর্তী নিবন্ধনালার অর্ধেক দখল করে তিনতলা বিল্ডিং