মুখে একুশের আলপনা, মাথায় বাংলাদেশের পতাকা, বুকে কালো ব্যাজ। কণ্ঠে সবার চির অম্লান সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি…’ ভাষা শহীদদের প্রতি নিবেদিত শ্রদ্ধার ফুলে বর্ণিল হয়ে উঠেছে শহীদ মিনারের বেদি। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সংগঠন, প্রতিষ্ঠান- ফুল আর ব্যানার হাতে সবাই এসেছে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। মাতৃভাষার প্রতি এমন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেখানোর সৌভাগ্য আর কোন জাতির নেই।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকায় এবার চট্টগ্রামবাসী অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরের আলো ফোটার আগেই কোলাহল বাড়তে থাকে মিউনিসিপ্যাল স্কুলকে ঘিরে। পরনে বর্ণমালা অংকিত সাদা কালো ডিজাইন করা শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শাল, কামিজ। মুখের মাস্কেও অ, আ কিংবা শহীদ মিনার। কারো মাঝে ক্লান্তি নেই, দৈনন্দিন ব্যস্ততা নেই। সবাই এসেছেন ভাষা শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে। কারো হাতে পুষ্পার্ঘ, কেউবা বজ্রমুষ্ঠি ঊর্ধ্বে তুলে শ্লোগানে শ্লোগানে বলছে ‘একুশ আমার চেতনা, একুশ আমার বিশ্বাস/আমি বাংলায় কথা কই, বাংলার কথা কই।’
অস্থায়ী শহীদ মিনারে সকালে ফুল দেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন প্রমুখ। সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। এছাড়াও একুশের প্রভাতে নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানসহ সকলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে রোববার রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে নগরীর মিউনিসিপ্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে নির্মিত শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে প্রথম শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। মেয়রের পরেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক। পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলওয়ে পুলিশ, চট্টগ্রাম জেলা আনসার কমান্ডার, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম কারাগার, পরিবেশ অধিদফতর, পরিচালক -স্বাস্থ্য, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বিশিষ্টজনদের শ্রদ্ধা জানানোর পর উন্মুক্ত হয় শহীদ মিনার।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ না করতে বলা হয় বিধিনিষেধে।