বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৪ জুন, ২০২১ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে জনগণ। প্রথম করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর সরকারি ও বেসরকারিভাবে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে এ অবনতি। ফলে সারা দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষত রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় করোনার প্রকোপ বেড়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন প্রকোপ বাড়ছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ফটিকছড়ি উপজেলা আট দিনের জন্য লকডাউন করা হয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাকি উপজেলা ও নগরীর আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁসহ সব দোকানপাট রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে বলে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এছাড়া বন্ধ থাকবে সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্রও। এ সময় সরকারি, আধা সরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে খোলা থাকছে।
বিডিনিউজের খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে সংক্রমণ বাড়ার মধ্যে দেশে এক দিনে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪ হাজার ৮৪৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের। এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত নয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৪ এপ্রিল এক দিনে ৫ হাজার ১৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল। করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজধানী ঢাকাকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। গত মঙ্গলবার ভোর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাহন ঢাকার টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি। শহরে প্রবেশ করতেও পারেনি কোনো যাত্রীবাহী বাস। বন্ধ করে দেয় সরদঘাটের সঙ্গে অন্য জেলার নৌ যোগাযোগ। দিনভর কমলাপুর রেলস্টেশন ট্রেন চলাচল করলেও বিকালে সিদ্ধান্ত হয় বন্ধ করে দেওয়ার। সব মিলিয়ে ঢাকাকে পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার প্রথম দিনে অবশ্য পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিকল্প বাহনে জরুরি কাজে ঠিকই গন্তব্য গেছেন যাত্রীরা। যাদের অফিস কাছাকাছি আবার যারা জানেন না সরকারি বিধিনিষেধের কথা সেসব মানুষকে চেকপয়েন্টে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। এর আগের দিন ঢাকা বিভাগের সাত জেলায় নয় দিন জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর আশপাশের সাত জেলায় চলছে কঠোর বিধিনিষেধ।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেখা যাচ্ছে, অলিগলির ভেতরে থাকা ক্লাব-কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে, বৌ-ভাতসহ নানারকম অনুষ্ঠান হচ্ছে। এসব বন্ধ থাকবে। কোনো আয়োজন হলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। প্রয়োজন হলে বাকি উপজেলাকে লকডাউন করা হবে। পূর্বের মতো করোনা নিয়ন্ত্রণে মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণার কাজ চালানো হবে। সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের যুক্ত করে করোনা প্রতিরোধ করার জন্য মেয়রকে অনুরোধ জানান তিনি। একই সাথে পতেঙ্গা সৈকতে যাতে কেউ প্রবেশ না করে, জনসমাগম করতে না পারে তার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশকে অনুরোধ করা হয়।
এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, কিছু মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের দায় বয়ে বেড়াতে হচ্ছে পুরো দেশবাসীকে। ভোগ করতে হচ্ছে সমস্ত কষ্ট। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির জন্য এই বেপরোয়া মানুষগুলো অনেকাংশে দায়ী। কিছু মানুষের বেপরোয়া আচরণের ফল পুরো দেশবাসী ভোগ করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে যেসব জেলা বা এলাকায় বিধিনিষেধ চলছে, সেসব স্থানে কেউ যাতে বিধিনিষেধ অমান্য করতে না পারে এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
যদি কেউ বিধিনিষেধ অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। টিকা নেওয়ার পরও করোনা থেকে পুরোপুরি সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। অতএব করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না, তাদের বাধ্য করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। মান বাড়াতেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে