আওয়াামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংগঠনে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ-সম্মেলনে তাদের আরও উঁচু পদে নিয়ে যাওয়া যায়। যারা দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ করে ৪০ ও ৫০ বছর পার করেছেন তাদের দলের মধ্যে (আওয়ামী লীগের কমিটিতে) নেওয়া হবে। তরুণ নেতৃত্বেকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমাদের দরকার নবীণ ও প্রবীণের সমন্বয়ে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা। বিষয়টি নগরের নেতাদের মাথায় রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন, বিশেষ করে দলীয় প্রতীক নৌকা যারা পেয়েছেন, অথচ তাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন, তাদের দলের কোনো পদে রাখা হবে না। সম্মেলনের সময় সবাইকে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।
গতকাল সোমবার সার্কিট হাউসে মহানগর আওয়ামী লীগের সাথে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিনিময় সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রথমে সকাল সাড়ে ৯টায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকারী সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় সম্পাদকমণ্ডলীর সাথে এবং বিকাল ৩টায় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতিদের সাথে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিটি বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। দলে যোগদানের বিষয়ে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ বড় সংগঠন। দেশে লাখো, কোটি নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের রয়েছে। সে হিসেবে দলে যোগদানের খুব বেশি প্রয়োজন নেই। তারপরও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে বিশ্বাসী হলে এবং শ্রদ্ধাশীল হলে, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই, অনৈতিক কোনো কাজের অভিযোগ নেই, সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি, কেন্দ্রের অনুমোদন সাপেক্ষে যোগদান করা যেতে পারে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আমরা চট্টগ্রামের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে গত দুইদিন টানা বৈঠক করেছি। এখানে সংগঠনের যে শক্তিশালী অবস্থান দেখেছি, দেশের যে কোন অঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অনেক বেশি শক্তিশালী। একানে কোন গ্রুপিং নেই। চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির অনুপ্রেরণার স্থান। চট্টগ্রামকে আমরা সব সময় আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে মনে করি। আমরা চাই এই শক্তি আরও বৃদ্ধি পাক। সকল আন্দোলন-সংগ্রামে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
মাহবুব উল আলম হানিফ আরও বলেন, আগামী জুলাই মাসে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির নির্দেশনা আছে। আগস্ট শোকের মাস। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাসে প্রতিটি ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন করবো। নভেম্বরে থানা সম্মেলন শেষ করতে চাই। এরপর ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে থেকে সময় নিয়ে মহানগর সম্মেলন করবো।
প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর প্রসঙ্গ টেনে দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেন, এই চট্টলা স্বাধীনতা-উত্তর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনে মহিউদ্দিন চৌধুরী সর্বাগ্রে ভূমিকা নিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী দেখিয়েছিলেন আন্দোলন কিভাবে করতে হয় ও ন্যায্য দাবি কিভাবে আদায় করতে হয়। চট্টগ্রামের আন্দোলন সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
বিকাল ৩টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদের, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাড. সুনীল কুমার সরকার, অ্যাড. ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সফর আলী, শেখ মাহমুদ ইসহাক।
সকাল সাড়ে ১১টায় সম্পাদক মণ্ডলীর সভায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী, বদিউল আলম, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাসান মাহমুদ শমসের, অ্যাড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ হোসেন, জহুর আহমদ, মাহবুবুল হক মিয়া, দিদারুল আলম চৌধুরী, জোবাইরা নার্গিস খান, আবদুল আহাদ, মো. আবু তাহের, ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, জহর লাল হাজারী, হাজী শহীদুল আলম।
সকাল সাড়ে ৯টায় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এম এ জাফর, মো. আবুল মনসুর, পেয়ার মোহাম্মদ, নুরুল আমিন শান্তি, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কিষাণ চৌধুরী, গাজী শফিউল আজিম, কামরুল আজম বুলু, নুরুল আবসার মিয়া, বখতেয়ার উদ্দিন খান, জাফর আলম চৌধুরী, দোস্ত মোহাম্মদ, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, নজরুল ইসলাম বাহাদুর, মহব্বত আলী খান, আবদুল লতিফ টিপু, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, মোহাম্মদ জাবেদ, বেলাল আহম্মদ, মোরশেদ আক্তার চৌধুরী।
কেন্দ্রের কাছে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের যত অভিযোগ : কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী অভিযোগ করে বলেছেন, আমাদের সরকারের আমলে এই চট্টগ্রামে ওয়াসাসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্যানেল লয়ার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সরাসরি জামায়াতের লোক। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দরেও সরাসারি জামায়াতপন্থি প্যানেল লয়ার নিয়োগ পেয়েছেন। আমাদের মহানগর আওয়ামী লীগে কি যোগ্য লোকের এতই অভাব রয়েছে! আমাদের সরকারের আমলে আমাদের কোন লোক মূল্যায়ন হয়না! উনাদেরকে কারা সুপারিশ করেন আমাদের জানা নেই।
মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক চন্দন ধর তার বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের সরকার একটানা ১২ বছর ক্ষমতায়। এই ১২ বছরে চট্টগ্রামে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমাদের-মহানগর আওয়ামী লীগের কোন নেতা সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পাননি। আমি চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমারটা গ্রহণ করা হয়নি।
মশিউর রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেছেন, আমি মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। প্রতি বছরের মতো এই বছরও আমরা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫০ হাজার গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নিয়েছি।
মাহবুবুল হক মিয়া বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী, অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ আছি।
কার্যকারী সদস্য বেলাল আহম্মদ তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মৌলভী ছৈয়দকে রাষ্ট্রীয় পদক দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, প্রতি বছর নানান ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অনেকজনকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেয়া হয়। অনেক ব্যবসায়ীকেও পুরস্কার দেয়া হয়। অথচ বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতবাদকারী শহীদ মৌলভী ছৈয়দকে এখনো পর্যন্ত কোন রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয়নি। আমি অকুতোভয় এই বীরকে রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া জন্য আপনাদের মাধ্যমে দাবি জানাচ্ছি।












