চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসভবনে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিদ্রোহীদের ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের কাছে অভিযোগ করেন। এ সময় বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বিদ্রোহীদের কোনো ছাড় নেই। পার্টির শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলেন এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে বৈঠক থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সাথেও কথা বলেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হয়। বৈঠকে সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৩০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি দলীয় প্রার্থীদের বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগকে ৮ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ৮ তারিখের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নিলে ৯ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে যাদের পদ-পদবি আছে তাদের বহিষ্কার করা হবে। যাদের পদ-পদবি নেই তারা আমাদের কেউ নয়, তারা বহিরাগত।
তিনি বলেন, নৌকার মেয়র প্রার্থী এবং দল থেকে যাদের কাউন্সিলর প্রার্থী দেওয়া হয়েছে সেটা নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত। এটার ওপর কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। নেত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য এবং দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য যা যা করার প্রয়োজন তা করা হবে।
তিনি বলেন, মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে। মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কেউ যদি বিদ্রোহীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করে তাদেরকেও বহিষ্কারের সুপারিশ করা হবে।
এ ব্যাপারে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী জহরলাল হাজারী আজাদীকে জানান, বৈঠকে আমরা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ভাইকে বলেছি, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে আঁতাত করে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছেন। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান। আমাদের চেষ্টা হচ্ছে ভোট কেন্দ্রে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি যাতে বাড়ে। সাধারণ ভোটার যাতে ভোট কেন্দ্রে আসেন এবং ভোট দেন। কিন্তু বিদ্রোহীরা সেটা চান না। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধভাবে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রীকে সমস্ত কাউন্সিলর উপহার দেওয়া। কিন্তু বিদ্রোহীরা সেটা বানচাল করতে চায়।
তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ভাই আমাদেরকে এখন থেকে উঠান বৈঠক শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ৮ জানুয়ারি প্রচার-প্রচারণা শুরু হলে ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন।
১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. নুরুল আমিন আজাদীকে জানান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাহেবের সাথে বৈঠক হয়েছে। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। তিনি বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। দলের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না এবং বিদ্রোহীদের ব্যাপারে তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। কেন্দ্রেও ফোন করেছেন। আমাদেরকে নৌকার মেয়র প্রার্থী এবং নিজেদের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জহরলাল হাজারী, ২৬ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন, ১৩ নং ওয়ার্ডের মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, ৯ নং ওয়ার্ডের নুরুল আবসার, নজরুল ইসলাম বাহাদুর, গোলাম হায়দার মিন্টু, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সলিম উল্লাহ বাচ্চু, গোলাম মো. জোবায়ের, মো. আতিক উল্লাহ, আবদুস সালাম, পুলক খাস্তগীর, মো. সাইফুদ্দিন সাইফু, মোবারক আলী, ২ নং ওয়ার্ডের হাজী মো. ইব্রাহিম, ১২ নং ওয়ার্ডের মো. নুরুল আমিন, ১ নং ওয়ার্ডের গাজী শফিউল আজিম, নুরুল আমিন মিয়া, শহীদুল ইসলাম, নেছার আহমদ মনজু, নিলু নাগ, জোবাইরা নার্গিস খান, আনজুমার আরা, লুৎফুন নেছা দোভাষ বেরী, হুরে আরা বিউটি প্রমুখ।
উল্লেখ্য, আগামী ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।