৭টি ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক)। কারণ ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চমেকের কাছে গত ৬ মাসের বকেয়া বিল বাবদ ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে পিডিবির। এ বিল পরিশোধে বেশ কয়েক মাস ধরে নোটিশ দিয়ে আসছিল পিডিবি। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় বিল পরিশোধে ব্যর্থ হয় চমেক কর্তৃপক্ষ। তবে হঠাৎ করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে চমেকের প্রশাসনিক ভবন, দুটি হোস্টেল, ভেনম রিসার্চ সেন্টার ও ফরেনসিক ভবন বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ফলে ছাত্র–ছাত্রীদের ক্লাস পরীক্ষায় বিঘ্নিত হয়। এছাড়া ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সাপ ও সাপের বিষ সংরক্ষণও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তবে চমেক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক জরুরি ভিত্তিতে জেনারেটরের মাধ্যমে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ সচল রাখে। পরবর্তীতে বরাদ্দ পাওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হবে কর্তৃপক্ষের এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গত সোমবার ৪টার দিকে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেয় পিডিবি।
এদিকে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিআরবি কার্যালয়ের প্রায় এক কোটি ৫৮ লাখ টাকা বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যুতের পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। শুধুমাত্র রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সিআরবি কার্যালয়ে গত ৬ মাসে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। বারবার বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়া হলেও বিল পরিশোধ না করায় গতকাল সোমবার পিডিবি সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে অভিযান চালায়। প্রায় ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদরদপ্তরে সিআরবি। এতে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেগ পেতে হয়েছে।
পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী আজাদীকে বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কাছে আমাদের পিডিবির বকেয়া অনেক। রেলওয়ের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অফিস রয়েছে। সব অফিসে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। রেলওয়ের ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। তারা কিছু বিল পরিশোধ করেছে। সিআরবিতে ১ কোটি ৫৮ লাখ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। কয়েকবার নোটিশ দিলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর তাদের (রেলওয়ের) পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বকেয়া বিল পরিশোধের আশ্বাস দেয়ার পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংযোগ দেয়া হয়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ৪৬.৪ শতাংশ বেশি। এই সক্ষমতা দেশের অর্থনীতির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ উৎপাদন না করলেও দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দিতে হয় ক্যাপাসিটি চার্জ। এই চার্জের নামে এখন হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে সরকারের তহবিল থেকে। রোববার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক ইন সেন্টারে প্রস্তাবিত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেটে ‘পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সেক্টরে চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলেও ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের জন্য বাড়তি খরচ (ক্যাপাসিটি চার্জ) বহন করছে সরকার। তারা বলেন, টেকসই জ্বালানি নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেট। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিনির্ভরতার কারণেই জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমেছে। তাঁরা বলেন, সরকারের ভুলনীতির কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসান ২০২৫ সাল নাগাদ ১৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে। সরকারের ভর্তুকি এবং বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পরও এই বিপুল পরিমাণ লোকসান হবে।
সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ব্যবহার করা না গেলেও কেন উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে? তিনি বলেন, সরকার এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করেছে তা ২০৩০ সালেও প্রয়োজন হবে না। আজ থেকে ৬ বছরে চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ২৫ শতাংশ রিজার্ভ ধরলে তখন ২৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা হলেই হয়। আবার সক্ষমতা বাড়লেও দেশে লোডশেডিং হচ্ছে।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে অযৌক্তিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে না নিয়ে বরং অবৈধ সংযোগ, দুর্নীতি, সিস্টেম লস বন্ধ করে সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া দরকার। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে, সেগুলো আদায় করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আমরা জানি, সরকারি সেবা খাতে জনস্বার্থেই ভর্তুকি দেওয়া হয়। অতএব লোকসান কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।