বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে বাড়াতে হবে উৎপাদনও

| রবিবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:০০ পূর্বাহ্ণ

গ্রীষ্ম মৌসুমে যাতে লোডশেডিং কম হয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, যদি লোডশেডিং হয়, আগে ঢাকা শহরে হবে। পরে দেশের অন্য জায়গায় হবে। আগের মতো শুধু গ্রামে হবে না। শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের সিআরবিতে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। ফাওজুল কবির খান বলেন, বেশ কিছু ফ্যাক্টরের ওপর লোডশেডিং হওয়া না হওয়া নির্ভর করে। বিশেষ করে তাপমাত্রা বাড়লে চাহিদা বাড়বে। তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রিতে রাখলে এক থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি। কিন্তু অনেকেই এটি করছেন না উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, জনগণকে সচেতন হতে হবে। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, দুইটি কারণে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। উৎপাদন কম হলে যদি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন সেটি লোডশেডিং। আর ঝড় বৃষ্টিসহ কোনো কারণে যদি ফিউজ চলে যায়, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সেটি বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

গ্রীষ্ম মৌসুমে যাতে লোডশেডিং কম হয়, তার বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। পাশাপাশি আমরা যারা গ্রাহক, আমাদেরও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। গরম বৃদ্ধির সাথে সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিংও বাড়ে। আসলে বিদ্যুৎ অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। বিদ্যুৎ মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। তার কোনো বিভ্রাট বা লোডশেডিং মানুষের কাছে অসহ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রাহক তার চাহিদানুযায়ী জ্বালানিসহ অন্যান্য ইউটিলি সার্ভিস ব্যবহার করবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাতে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে তাকে সচেতন হতে হবে। আর সচেতনতা তখনই সৃষ্টি হবে, যখন গ্রাহক পর্যায়ে এতদবিষয়ে পর্যাপ্ত আর্থিক ও কারিগরি জ্ঞান বা তথ্য থাকবে। আর গ্রাহককে এ জ্ঞান বা তথ্য প্রদানের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং ইউলিটি সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা আরও বেশি প্রযোজ্য। গ্রাহক যদি সাশ্রয়ী হওয়ার আর্থিক দিকটি অনুধাবন করতে পারেন, তাহলেই তিনি এর জন্য আগ্রহী হবেন। হিসাব কষে বুঝিয়ে বলতে হবেএক ঘণ্টা কম বিদ্যুৎ ব্যবহারে কী পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে এবং বিদ্যুৎ বিলে তার যথাযথ প্রতিফলন থাকতে হবে। সাশ্রয়ী গ্রাহকের জন্য প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টিও চিন্তা করা যেতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম দু বছর আগে ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ এবং সৌরবিদ্যুৎ অবহেলিত কেন’ শীর্ষক একটি কলামে লিখেছিলেন, দেশের অন্য কোথাও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন যথাযোগ্য মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। হয়তো সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ এবং কয়লা ও গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মেগাপ্রজেক্টগুলো অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে ভেবে সরকারপ্রধানের নজর ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ’এই ছোট ইস্যুটিতে ফিরে আসেনি! কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশের ১০টি সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেকটিতে একটি করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠা পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে বর্জ্যব্যবস্থাপনার দিক্‌ থেকে অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবি রাখে। দেশের আরেকটি দুঃখজনক অবহেলার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সৌরবিদ্যুতের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। গত ২০২০ সালের মধ্যেই ভিয়েতনাম বাড়ির ছাদের সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। অথচ বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এখনো এক হাজার মেগাওয়াটের নিচে রয়ে গেছে। এই অবাককরা তথ্যদুটিকে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের এনার্জীসম্পর্কিত সঠিক পথ নির্ধারণের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ববহ বিবেচনা করতে হবে।। কারণ, ২০২০ সাল থেকে এলএনজি’র অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক দামবৃদ্ধি বাংলাদেশের প্রধানত ফসিলফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানীনির্ভর বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচকে ইতোমধ্যেই প্রচণ্ডভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, আর ভিয়েতনামের সোলারএনার্জী উৎপাদনে এই অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জনের খবরটি চোখে আঙুল দিয়ে বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে সোলার এনার্জীকে যথাযথ অগ্রাধিকার দিলে বাংলাদেশও অদূর ভবিষ্যতে এলএনজিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে সুলভে বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো প্রধানত প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর। দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তিনি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনকে নির্দ্বিধায় দেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রধান অগ্রাধিকার প্রদান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এখন সকলেরই উচিত বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের অপচয় রোধ করার দিকে নজর দেওয়া। অস্বীকার করা যাবে না যে আমরা নিজেদের অজান্তে প্রতিদিনই অনেক বেশি বিদ্যুৎ অপচয় করে ফেলি। একই সঙ্গে দিনকে দিন বাড়তে থাকা প্রযুক্তির পরিমাণ তো আছেই। তাই বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময় তা অপচয় হচ্ছে কি না সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া মানে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে দেশকে এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করা। আমাদের সবাইকে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে