ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে বিধ্বস্ত কক্সবাজার জেলা ও বাঁশখালীতে এখনও স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ সরবরাহ। খাবার ও পানীয় সংকটে কয়েক লাখ মানুষ। পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে কাজ চলছে।
কক্সবাজার ও রামু প্রতিনিধি জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার উপকূল দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, এখনও সড়ক ও উপসড়কে উপড়ে পড়া গাছ সরানোর কাজ চলছে। অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ দেখা গেছে। পানির অভাবে রান্নাসহ গৃহস্থালীর কাজ করতে পারছে না মানুষ। অনেকেই বাড়ি–ঘর মেরামতের কাজ শুরু করেছেন।
সমিতি পাড়ার বাসিন্দা আয়েশা খাতুন (৮০) জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে কুতুবদিয়া থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এখানে বসতি গেড়েছেন। সাগরপাড়ের ঝাউবনে একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকতেন। ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে তার বাড়িটি গাছ চাপায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বৃদ্ধ আয়েশার এখন ঘরও নেই, খাবারও নেই। তার মতো এই ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়ায় কয়েকশ বাড়ি কিছু আংশিক ও কিছু পুরো বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব বাড়ি–ঘরে খাবার ও পানীয় সংকট এখন তীব্র। সমিতি পাড়ার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, তাদের এলাকায় ২২০টি পরিবারের মধ্যে অন্তত ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার পৌর মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার পৌরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ৭০টি ইউনিয়ন, কক্সবাজার ও মহেশখালী পৌরসভার ৩৭ হাজার ৮৫৪ বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১০৫টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ৭৪৯টি বাড়ি–ঘর। এতে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। হামুনের তাণ্ডবে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫৪টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। ৪৯৬ স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। ৮০০টি স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের গনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন পুনঃস্থাপন করতে আরও অন্তত দুইদিন লাগতে পারে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়াপাড়া পরিদর্শন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে যা দেখেছি বরাদ্দকৃত এসব ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। আমি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আরও ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়ার চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এজন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসনককে আরও কী কী প্রয়োজন হবে তার একটি সঠিক তথ্য দ্রুত পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
কুতুবদিয়া–মহেশখালীর সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, সামনে নির্বাচন। মানুষের কাছে আমাদের যেতে হবে। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দুর্গত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনঃনির্মাণ করার জন্য এক হাজার বান্ডিল ঢেউ টিন, ৩০ লাখ টাকা ও শিশুখাদ্যও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, গত মঙ্গলবার ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানার পর থেকে এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। কবে বিদ্যুৎ আসবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি পল্লী বিদ্যুৎ বাঁশখালী জোনাল অফিসের দায়িত্বরতরা। এছাড়া, অধিকাংশ নলকূপ বিদ্যুৎ চালিত হওয়ায় বিদ্যুতের জন্য পানি উত্তোলন করতে পারছেন না উপজেলাবাসী।