বিদ্যুৎহীন রাঙামাটির ১৩ ইউনিয়ন

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা পার্বত্য রাঙামাটি। ষাটের দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে এ জেলার মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা পেতে শুরু করে। তবে দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছর পরেও বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত জেলার ১৩টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। এমনকি জেলার সদর উপজেলার আওতাধীন তিনটি ইউনিয়নে পৌঁছায়নি বিদ্যুতের আলো। কাপ্তাই হ্রদের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্ভাগা তিন ইউনিয়ন জীবতলী, বন্দুকভাঙা ও বালুখালী। এছাড়াও রয়েছে লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্যা, বগাচত্ত্বর ও ভাসান্যাদম ইউনিয়ন। বরকল উপজেলার সুবলং, আইমাছড়া, ভূষণছড়া ও বড় হরিনা ইউনিয়ন। বিলাইছড়ির ফারুয়া ও বড়থলী ইউনিয়ন ও জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়ন মিলে মোট ১৩টি ইউনিয়ন এখনো বিদ্যুৎবিহীন।

জেলার লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের চাইল্যাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল হক বলেন, বছরের বড় একটা সময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা গরমে ক্লাসে কষ্ট পায়। তারা পড়ালেখায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও খাবার পানি সরবরাহ, ল্যাপটপ চার্জ দেয়ার মতো কাজগুলো করতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের সুযোগ থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত। এক কথায় বিদ্যুৎ ছাড়া মানসম্মত পাঠদান থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

জেলার আরেকটি দুর্গম উপজেলা বরকল। এ উপজেলার মানুষের জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কাপ্তাই হ্রদ। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এ উপজেলায় বিদ্যুতের সুবিধাও নেই। কয়েকবছর আগে উপজেলা সদরের কিছু এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা পৌঁছালেও ইউনিয়নগুলো এখনো অন্ধকারেই আছে। উপজেলার সুবলং, আইমাছড়া, ভূষণছড়া, বড় হরিনা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ নেই। এসব এলাকায় নেই সড়ক যোগাযোগ। জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতেও প্রায় একই চিত্র।

বরকল উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া বড় হরিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিলাময় চাকমা বলেন, ইউনিয়নের সাথে উপজেলা পরিষদের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার এবং নেই কোনো সড়ক যোগাযোগ। তবে সীমান্ত সড়ক হওয়ায় ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ পাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলার বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী ও নানিয়ারচর উপজেলার সব ইউনিয়নে বিদ্যুৎ থাকলেও বেশকিছু ইউনিয়নে আংশিক বিদ্যুতের সুবিধা রয়েছে।

রাঙামাটি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা বিতরণ বিভাগ। জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুত সরবরাহ করে। রাঙামাটি জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ৮টিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্গম। পাহাড়ি অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ না হলে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন সচল রাখা খুবই কঠিন কাজ। পাশাপাশি রয়েছে জনবলের বিশাল সংকট। বিদ্যুতের উন্নয়নের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের জনবল সংকট দূর করতে হবে। আশা করছি, অতি শীঘ্রই তিন পার্বত্য জেলার বিদ্যুতের উন্নয়নে একটি মেগাপ্রকল্প পাশ হতে যাচ্ছে। এটি হলে এখানকার মানুষের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাইফ সাপোর্টে গুলিবিদ্ধ হাদি
পরবর্তী নিবন্ধহর্নের শব্দে ক্ষুব্ধ হয়ে বিয়ের গাড়ি ভাঙচুর