নগরীতে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরজীবন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুতের যাওয়া আসার কারণে মহা বিরক্ত সাধারণ মানুষ। গত ১ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি অতিষ্ঠ গ্রাহক’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের এই ভেল্কিবাজিতে বিঘ্নিত হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের কাজকর্ম। নষ্ট হচ্ছে ইলেকট্রোনিক্স যন্ত্রপাতি। বিঘ্ন ঘটছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে। তবে পিডিবির দাবি, এখন লোডশেডিং নেই। বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের কারণে শার্ট ডাউন দিতে হচ্ছে। এছাড়া ভারি বাতাসের কারণে গাছের ডাল-পালা ভেঙে পড়লে সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বিদ্যুতের এই ঘন ঘন আসা যাওয়া দেখে আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ গ্রাহক।
বিদ্যুতের অভূতপূর্ব উৎপাদনের পরও সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ থেকে যদি বঞ্চিত হন, তাহলে তা হবে চরম দুঃখজনক। যত দূর জানা যায়, সব সূচকেই প্রত্যাশার চেয়ে অগ্রগতি এসেছে বিদ্যুৎ খাতে। বর্তমান সরকারের সাড়ে দশ বছরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলে দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ঘরে এখন জ্বলছে বিদ্যুতের বাতি। ঘুরছে পাখা চলছে টেলিভিশন ফ্রিজ। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এ বছরের মধ্যে দেশের সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশের সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সকল কর্মী নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। উৎপাদন-সঞ্চালন এবং বিতরণে যে আমূল পরিবর্তন এসেছে তাকে ধরে রাখতে চায় সরকার। বিদ্যুৎ খাতের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও বাস্তবায়ন করতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৭ শতাংশ আবাসিক খাতে ব্যবহার হয়। সম্প্রতি সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫৭ শতাংশ আবাসিক খাতে, ১০ শতাংশ বাণিজ্যিক খাতে এবং ২৮ শতাংশ শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছয় হাজার ৭২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম। ফলে মেরিট অর্ডার ডেসপাচ অনুযায়ী কিছু কিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়ে গেছে। ‘এছাড়া গ্যাসের স্বল্পতার কারণে কিছু কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক ক্ষমতায় চালু রয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি থেকে বিশ্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে বিদ্যুতের চাহিদা এবং উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকবে।’
বিদ্যুতের ক্রমাগ্রতিতে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিদ্যুতের আশাতীত এ উৎপাদন আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিপর্যয় ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এই উন্নয়নের ফল জনগণ ভোগ করতে পারছে বলে মনে হয় না। বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং রীতিমত অসহ্য। এছাড়া দুর্নীতি অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ নিরন্তর। এসব দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরকে অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যকে ধরে রাখতে না পারলে তা হবে দুঃখজনক। জনবলের স্বল্পতা এবং রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাফল্যকে উপভোগ করতে চাই। পুরো দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়িত হোক-সেই অগ্রযাত্রার সাথে সাথে এটাও প্রত্যাশা করি যে- লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে অচিরেই।
পিডিবির পক্ষ থেকে বিদ্যুতের কোনো লোডশেডিং নেই বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বলা হচ্ছে, বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের কারণে শার্ট ডাউন দিতে হচ্ছে। এছাড়া ভারি বাতাসের কারণে গাছের ডাল-পালা ভেঙে পড়লে সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। তা’ই যদি হতো, তাহলে মিনিট কয়েক পর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করতো না বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। আমরা সরকারের সাফল্যকে ধরে রাখার পক্ষে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যে সাফল্য তারা দেখিয়ে চলেছেন, সুষ্ঠু বন্টনের মাধ্যমে বা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের মাধমে এ উন্নয়ন কার্যক্রমকে উপভোগ করতে চাই।