বোয়ালখালী ও নগরীকে সংযুক্ত করেছে শতবর্ষী কালুরঘাট রেল সেতু। বিদ্যুতের তার চুরি হওয়ায় সেতুর বাতিগুলো জ্বলছে না প্রায় ২৩ দিন ধরে। সন্ধ্যা নামলে সেতুতে নেমে আসে অন্ধকার। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারো মানুষ। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মোটরসাইকেল, সিএনজি টেক্সি, সাইকেল ও পথচারী চলাচল করে। কিন্তু আলোর অভাবে অনেক সময় দুই দিক থেকে একসাথে যানবাহন উঠলে সংঘর্ষ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। এর আগেও একাধিকবার দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কেউ কেউ আহত হয়েছেন। গত ছয় মাসে এই সেতুতে কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে।
জানা যায়, ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরনো কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে যানবাহন ও পথচারী পারাপারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেতুতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোনো তদারকি নেই। দুর্ঘটনা ঘটছে। সেতুতে একাধিক ট্রেন–গাড়ি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাই রাতে মানুষ চলাচল করতে ভয় পায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা বলেন, রাতে সেতুতে উঠলে মানুষ বা যানবাহন অনেক সময় দেখা যায় না। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, জরুরি যানবাহনের চলাচলের দিক থেকেও বড় বিপদের কারণ হতে পারে। একটি শতবর্ষী গুরুত্বপূর্ণ সেতু, যা প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচলের পথ, সেটি নিরাপদ রাখা প্রশাসনের দায়িত্ব। সুতরাং কালুরঘাট সেতুতে থাকা লাইটগুলো দ্রুত সচল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হয় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অন্ধকারে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত আলোর ব্যবস্থা করা দরকার।
নগরীর একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরিরত মো. আবছার বলেন, সংস্কারের পর রাতে লাইটগুলো জ্বলত। নিরাপদে কাজ সেরে বাড়ি যেতে পারতাম। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে লাইটগুলো জ্বলছে না। ফলে সেতু পারাপারে নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। অন্ধকারে সেতুতে চলাচল মোটেও নিরাপদ নয়। লাইটের পাশাপাশি উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা লাগানো প্রয়োজন।
গতকাল রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে রেল আসায় সেতুর লাইনম্যান পথচারীদের বারবার সতর্ক করছেন। পথচারীরা তা না শুনে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। এদিকে ট্রেন সেতুর কাছাকাছি চলে এলেও সেতু অন্ধকার বিধায় ভালো করে দেখা যাচ্ছিল না। ফলে কেউ টেক্সি মনে করে সেতুতে হাঁটছে। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়।
জান আলী হাট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার নেজাম উদ্দিন বলেন, স্থানীয়রা অনেকে আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। লাইটগুলো সচল করতে ৩১ আগস্ট রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জরুরি চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, সংস্কারকালে সড়কবাতি রক্ষণাবেক্ষণসহ নিরাপত্তার দায়িত্ব ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের। দ্রুত সড়কবাতি চালুর জন্য ম্যাক্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুনভাবে সংস্কারের পর পথচারীদের সুবিধার্থে ৩১টি স্ট্রিটলাইট স্থাপন করা হয়েছে কালুরঘাট সেতুতে। ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৮০০ ফুট বৈদ্যুতিক ক্যাবল চুরি হয়েছে।
ম্যাক্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, সেতুর বাতিগুলো সচলের জন্য কাজ করছি। এ পর্যন্ত দুইবার ক্যাবল চুরি হয়েছে। আমরা রেল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি।