বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং পরিস্থিতির উত্তরণ চাই

| বৃহস্পতিবার , ৭ জুলাই, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও বেড়েছে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং। বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজিতে দুর্ভোগ বাড়ছে। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ডিভাইস এখন ব্যাপক ঝুঁকিতে। ঝুঁকি বাড়ছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সরকারের সাশ্রয় নীতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে উচ্চ দরের এলএনজি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে কমেছে গ্যাস সরবরাহ। কমেছে বিদ্যুতের উৎপাদন। অনুসন্ধান বলছে, দিনে অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি কম সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। তাই সহসা লোডশেডিং থামবে বলে আশা করা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকারের এই সাশ্রয়ের কথা উল্লেখ করে জনগণকে সহনশীল হওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। গত ২৯ জুন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ৩ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। তাতে আমদানি করা গ্যাস অর্থাৎ এলএনজি ছিল ৮৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর থেকে প্রতিদিনই গ্যাস সরবরাহ একটু একটু করে কমানো হয়েছে। ৪ জুলাই গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ২ হাজার ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে এলএনজি ৫০৭ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলা বলছে, সোমবার দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু ২৯ জুন ছিল ১ হাজার ৮১ মিলিয়ন ঘনফুট। এই দুই দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ কমাতে দেখা গেছে। এই গ্যাস-রেশনিংয়ের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হলে তেল বা কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হতো। এবার তা হতে দেখা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি। যদিও সরকারি সূত্রগুলো দাবি করছে, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেখান থেকে কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এলএনজির নিয়মিত সরবরাহ চুক্তিতে কাতার এবং ওমান ট্রেডিংয়ের ওপর ভরসা করছে সরকার।
উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় সারা দেশেই কম বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এটি ফোর্স লোডশেডিং। অর্থাৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বাড়ালে লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন পড়তো না। তারপরও করা হচ্ছে। খোদ রাজধানীতে এতদিন যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল, সেখান থেকেও সরে আসা হয়েছে।
এদিকে, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, বিদ্যুতের ব্যাপারে আমাদের শুধু সাশ্রয়ীই হতে হবে না, আজকে যেমন আমি চিন্তাও করেছি আমি বলব, কিছুটা সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন একটু কমিয়ে দিয়ে- আমাদের যেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপাদানগুলো, সেগুলো যেন আমরা কম ব্যয় করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা একটা সুনির্দিষ্ট সময় যদি ধরে দিই, যে একেক এলাকাভিত্তিক, যে কিছুক্ষণের জন্য সেখানে বিদ্যুতের কিছু লোডশেডিং হবে- হঠাৎ যাবে, হঠাৎ আসবে (এমন) না, মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারবে। সেভাবেই আমাদের কিছু কিছু পদক্ষেপ এখন থেকেই যদি আমরা নিই, তাহলে আগামী দিনে যে আরো সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে, সেটার থেকে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব।
অনেক দেশই এখন জ্বালানি সংকটে ভুগছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, এমনকি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, বিভিন্ন দেশে যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তেমনি সেখানে বিদ্যুতের জন্যও এখন হাহাকার। তারা বলেই দিয়েছে, দিতে পারবে না। এই রকম নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা মাথায় রেখে ‘সতর্ক হয়ে চললে’ সমস্যা এড়ানো যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আসলে গত দুইতিন দিন ধরে নগরীর প্রায় এলাকায় দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার যাওয়া-আসা করাতে নগরবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছেন, লোডশেডিং শুধু চট্টগ্রামে নয়, সারাদেশে একই অবস্থা। জাতীয়ভাবে গ্যাস সংকট না কাটা পর্যন্ত এভাবেই চলতে হবে। এ কথা আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, বিদ্যুৎ খাতকে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এই খাতের ব্যাপক উন্নয়নও হয়েছে। বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এমনকি দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবু যখন গ্রাহকরা তার সুফল ভোগ করতে না পারে, তখন তাদের প্রতিক্রিয়া একটু কঠোর হবে বৈকি! আমরা খুব সহসা এই পরিস্থিতির উত্তরণ প্রত্যাশা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই্ দিনে