বিদ্যালয় হোক প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের বিজয়গাথা

আশফাকুর রহমান বিপ্লব | সোমবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার বা অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর্যের মতো অনেক স্থাপত্য যা দৃঢ়তার সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরার নীরবে সরব মাধ্যম। ঢাকার সাভার স্মৃতিসৌধ দর্শন আজকের প্রজন্ম বা বুড়ো খোকাদের আগ্রহ বাড়াবে ইতিহাস জানতে। নির্ভেজাল সাহসী শৈল্পিক ইতিহাস উপস্থাপনে প্রতারণার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ভূমিষ্ট হওয়ার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটশোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস। এক একটা স্মৃতিসৌধ আমাদের ইতিহাসের ধারক।

১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত শহীদ মিনার যার সূতিকাগার ঢাকা মেডিকেল কলেজ। মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাসকে ধারণ করে আছে (১৪ ডিসেম্বর)। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকার বাইরে আমরা যারা আছি তারা ভাষা শহীদ মিনারে ছুটে যাই শ্রদ্ধা জানাতে।

একি ধারাবাহিকতা চলছে প্রায় সর্বত্র। মিনার আর সৌধ এর পারিভাষিক পার্থক্য নেই তবে ব্যবহারিক এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় দুটি শব্দ ভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের সেই রক্তাক্ত আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে অন্যান্য মাধ্যম এর পাশাপাশি আমাদের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য এক একটি ইতিহাস।

আমাদের বেশীরভাগ বিদ্যালয়ে ভাষা শহীদ মিনার দেখা যায়, যেখানে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবসের একের ভিতর অনেক জাতীয় দিবসের শ্রদ্ধা জানাতে। একই সূত্রে গাঁথা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল। ভাবা যায় ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ইংরেজ প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ৫২ এর কোন দৃশ্যমান শহীদ মিনার আশির দশকেও ছিলো না. শেষ করতে হবে, তাই এক লাফে চলে আসি ১৯৮১ সালে। যে সালে ভর্তি হই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

সেই বিদ্যালয়ে বিশাল মাঠের পিছনে স্বল্প জায়গায় অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃশ্যমান তিন ফিট দৈর্ঘ্য আর দু ফিট প্রস্থের ছোট টিলা সিমেন্টের চামড়া ভেদ করে ইট ফোঁকলানো কালো সৌধ। যার ফলক নিশ্চিহ্ন। আমরা জানতামনা এই কালো পাথর কী ও কেন? এর উপরে বসতাম বসে আইস্ক্রিমও খেতাম। খেলার সরঞ্জাম রাখতাম।

আমাদের প্রয়াত আমিনুল হক স্যার বলেন এটা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ছিলো। যাই হোক, আমরা ৮৫ সালে জুন মাস হতে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবিতে সোচ্চার হলে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেই অল্প কিছু শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ১টাকা থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে প্রগতিশীল কিছু ছাত্র শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রথমবারের মত ১৯৮৬ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ স্মরণে প্রভাত ফেরি ও পুষ্পার্ঘ্য প্রদান করা হয় ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয় গেইট সংলগ্ন দৃশ্যমান স্থানে শহীদ মিনার এখন আরো সুন্দর।

আমরা ১৯৮৬ সালে যারা এসএসসি পাস করি তারা বিচ্ছিন্ন ছিলাম। তাদের কয়েকজন ২০১১ সালের চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস্‌ আয়োজিত বিদ্যালয়ের ১৭৫তম বর্ষপূর্তিতে দীর্ঘ ২৫ বছর পর একত্রিত হই। তারই ফলশ্রুতিতে ২৮ জানুয়ারি ৮৬ ব্যাচের ২৫তম বর্ষপূর্তি পালনের মধ্য দিয়ে ক্লাব অব কলেজিয়েটস ৮৬ গঠন করা হয়উদ্যোক্তা বন্ধুদের নাম তোলা রইলো অন্যত্র বলার জন্য। সেই থেকে আমরা প্রতিমাসে একবার মিলিত হই পাশাপাশি জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে যাই বিদ্যালয়ের একমাত্র স্মৃতিসৌধ ‘ভাষা শহীদ মিনারে’।

আমাদের মন কী যেন খোঁজে? কী যেন চায়? আমরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। ২০১৬ সালের অক্টোবর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ৩ নভেম্বর ২০১৬ সালে সৌধ নির্মাণ শুরু করা হয়। বন্ধুদের পাঁচশত টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকা অনুদানে প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে মাত্র দু মাসে সৌধের নকশা অনুমোদন সহ কাজ সম্পন্ন হয়। একি বছর চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস্‌ কর্তৃক আয়োজিত ১৮০ বর্ষপূর্তির ২৫শে ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন শহীদ জায়া জেসমিন আলম (শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুরিদুল আলমের স্ত্রী) এলাকার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিজয় ও অন্যান্য জাতীয় দিবসে এখানে আসেন। আমরা গৌরবান্বিত। আমরা এই মধ্য বয়সে নিয়মিত ৪০ থেকে ৪৫ জন মিলিত হই প্রতি মাসে দীর্ঘ পনের বছর ধরে। সুখে দুখে পাশে থাকা আর হরেক রকম সামাজিক সর্বজনীন কর্ম করা সাথে মানসিক প্রশান্তির ছেলেবেলায় ফিরে যাওয়া। আমাদের আশা কলেজিয়েট স্কুলে একটি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ নির্মিত হোক। বিদ্যালয় হোক স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়গাথা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাঠশালা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসেম্বরের আগুন পতাকা
পরবর্তী নিবন্ধবিজয়ের চেতনা আর টেকসই ভবিষ্যতের পথ