বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে

| মঙ্গলবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৩ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সরকার বৃহত্তর বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আরো বেশি পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ যাতে বাংলাদেশে আসতে পারে সেজন্য আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ সময় বাংলাদেশে বৃহত্তর বিদেশী বিনিয়োগ চাইলেন সরকার প্রধান। ১৯ নভেম্বর ফরেন ইনভেস্টরস্‌ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআইফিকি) ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং দু’দিন ব্যাপী ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো২০২৩ এর উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু কন্যা বিদেশী বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে ব্যাপক সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছি। এগুলো বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এককভাবে কোন দেশ যদি এক খণ্ড জমি চায় আমরা তাও দেব আবার যদি কেউ যৌথ উদ্যোগে করতে চান সেটাও করা হবে অথবা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে করতে চাইলে সেটাও করা হবে।’ তিনি বলেন, তার সরকার অনেকগুলো সংস্থা তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছেবাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ ইকোনমিক প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি (এইচটিপিএ) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ)। বিনিয়োগের সুবিধার্থে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে ওয়ান স্টপ পরিষেবা চালু করা হয়েছে। ‘ব্লুইকোনমি’র প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ব্লুইকোনমি খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে আমরা নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। লজিস্টিক শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং এ খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে অন্যান্য শিল্প খাতের উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষে জাতীয় লজিস্টিকস ডেভেলপমেন্ট পলিসি প্রণয়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে।’ ২০২৫ সালের মধ্যে শুধু লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ও শক্তিশালী রফতানি কৌশল এবং শিল্পনীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন প্রায় সতের কোটি মানুষের একটি বড় অভ্যন্তরীণ বাজার। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চপ্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডকে আমাদের দেশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনীক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩শ’ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অর্থনৈতিক নীতিসমূহের ক্ষেত্রে সরকার দ্রুত সুনির্দিষ্ট সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন করছে, যেখানে সরকারের ভূমিকা অনুঘটকের, নিয়ন্ত্রকের নয়। নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধকে ন্যূনতম একটি পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে; সরকার সুষম গতিতে বাণিজ্য ক্ষেত্রে উদারীকরণ করেছে; শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা, যৌক্তিক শুল্ক নির্ধারণ এবং রপ্তানি সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন সাধন করেছে; শিল্পহার কাঠামো ও আমদানিনীতির বিভিন্ন দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এই দেশে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন : অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য, ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন, বস্ত্র ও চামড়া, স্বয়ংস্ক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তেল, গ্যাস ও সমুদ্র অর্থনীতি।

তবে কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি। তারপরে রয়েছে যথাক্রমে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে আইনের দ্রুত প্রয়োগের অভাব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মাত্রাতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ, দুর্বল অবকাঠামো ও গ্যাসবিদ্যুৎ সংকট, জমির অভাব ও ক্রয়ে জটিলতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অঙ্কের ঋণ জোগানে অক্ষমতা এবং স্থানীয়দের সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যোগসূত্র ও সমন্বয়ের অভাব। এর বাইরেও রয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।

বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে দেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। দেশী বিনিয়োগকারীদের দেখে বিদেশীরা এগিয়ে আসবেন। তাদের মনে আস্থার সঞ্চার করতে হলে বাংলাদেশীদের স্বদেশে বিনিয়োগের উদাহরণ তুলে ধরতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে