বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট মাসের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, এ দুই মাসে ৫১ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তা এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বিদেশি ঋণ এসেছিল। আর পুরো অর্থবছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ ৭২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ পেয়েছিল, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ওই অংক ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ ঋণ-সহায়তা। এ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের যে তথ্য এসেছে, তাতে বাকি মাসগুলোতেও বিদেশি ঋণের নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি সামলে উঠতে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ গত অর্থবছরের শেষ দিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুগিয়েছিল। সে কারণেই অর্থবছর শেষে সব মিলিয়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই অর্থ সরকারের কাজেও লাগছে। রাজস্ব আদায় কম হওয়ার পরও আর্থিক সঙ্কট হয়নি। ব্যাংক থেকে বেশি ঋণও নিতে হয়নি সরকারকে। এক কথায় বলা যায়, মহামারীকালে দাতাদের মোটা অংকের ঋণ-সহায়তা সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের স্বস্তি এনে দিয়েছিল। বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ যে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে, তাতেও এই বিদেশি ঋণের অবদান দেখছেন আহসান মনসুর। কিন্তু সেই অবস্থা যে সব সময় থাকবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। দাতাদেরও একটা বাজেট থাকে; সেখান থেকে সব দেশকে তাদের সহায়তা করতে হয়, ঋণ দিতে হয়। এখন সঙ্কট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে; আর সরকারের পক্ষ থেকেও দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই গতবারের মতো ঋণ-সহায়তা এবার পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন আহসান এইচ মনসুর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত অর্থবছরে যে বিদেশি ঋণ এসেছিল তার অর্ধেকের বেশি, ৩৭৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার এসেছে, মহামারীকালের চার মাস- মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ-সহায়তা হিসেবে ১৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে কখনোই এক মাসে এত বেশি বিদেশি ঋণ আসেনি। তার আগে সর্বোচ্চ ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের ঋণ এসেছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাওয়া ৬২১ কোটি ডলার ছিল এক অর্থবছরে পাওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ঋণ-সহায়তা। গত অর্থবছরের মার্চ মাসে ১০১ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এপ্রিল ও মে মাসে পায় যথাক্রমে ৩০ কোটি ৬২ লাখ ও ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তা এক ধাক্কায় ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে আসে। দ্বিতীয় মাস অগাস্টে এসেছে ৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাতাদের কাছ থেকে যে ৭২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ, তার মধ্যে বিশ্ব ব্যাংক দিয়েছে ১৩০ কোটি ডলার।