বিদায়ের সুর বইমেলায়

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১১ মার্চ, ২০২২ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বাজছে বিদায়ের সুর। আগামীকাল শনিবার পর্দা নামবে বইমেলার। শেষ হবে ২১ দিনব্যাপী মেলার। অবশ্য গতকাল বৃহষ্পতিবার সমপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তবে আজ ও আগামীকাল স্টল খোলা থাকবে। ছুটির দিন হওয়ায় এ দুদিনও মেলা জমবে, পাঠকের ভিড় থাকবে এবং বাড়বে বিকিকিনিও। এমন প্রত্যাশা করছেন প্রকাশক-লেখকগণ। গত ২০ ফেব্রুয়ারি নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে শুরু হয় বইমেলা। এ মাঠে তৃতীয়বারের মতো মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করেছেন। মেলায় ৯৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১২০টি স্টল আছে।
গতকাল মেলামঞ্চে মেলার সমাপনী, মহান একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক মো. আকরাম খান। উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান।
বইমেলাকে ঘিরে প্রতিবছর একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে চসিক। এবারও প্রদান করা হয়েছে। তবে অতীতে কয়েকদিন আগে পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হলেও এবার তা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। এবারে পদক প্রাপ্তরা হলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে আবু ছালেহ, মুক্তিযোদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভাষা আন্দোলনে প্রতিভা মুৎসুদ্দি, শিক্ষায় অধ্যাপক আহমদ হোসেন (মরণোত্তর), চিকিৎসায় ডা. আনজুমান আরা ইসলাম, সাংবাদিকতায় আবু সুফিয়ান, সংগীতে ওস্তাদ মিহির লালা, ক্রীড়ায় মো. আকরাম খান, সমাজ সেবায় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, প্রবন্ধ-গবেষণায় ড. সুনীতিভুষণ কানুনগো, কবিতায় সেলিনা শেলী, শিশু সাহিত্যে এমরান চৌধুরী ও কথা সাহিত্যে মহি মাহম্মুদ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমার বিবেচনায় চট্টগ্রামের এ বইমেলা ঢাকার পর সবচেয়ে বড় বইমেলা। করোনা পরিস্থিতি না থাকলে তাহেল কলেবর আরো বৃদ্ধি পেত। নিয়মিতভাবে এ বইমেলা করা হলে খুব সহসা দেশের অভ্যন্তরে বইপ্রেমী, লেখক ও প্রকাশকদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে, প্রাণের মেলা হিসেবে দাঁড়াবে। একইসঙ্গে আর্ন্তজার্তিকভাবেও এর সুখ্যাতিও ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করার জন্য বইমেলার পাশাপাশি পুরস্কার প্রদান করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ জানাব। এতে পাঠভ্যাস তৈরি করবে এবং বইমুখী করবে। তিনি বলেন, আগামী বছর মেলার কলেবর বৃদ্ধি করে পাশের রাস্তায়ও যেন আয়োজন করা হয়। রস্তাটা ১৯ দিন বন্ধ থাকলে কিছু আসে যায় না। বিকল্প রাস্তা আছে। সুতরাং খুব একটা সমস্যা হবে না।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকের পৃথিবীর বাস্তবতায় মানুষের বই পড়ার অভ্যাস অনেক কমে গেছে। এখন মানুষ আগের মত বই পড়ে না। এর একটি কারণ হচ্ছে, মানুষের অবসর কমে গেছে। মানুষের বই পড়ার জন্য সময়টুকু এখন আগের মত আর নাই। মানুষ শুধু ছুটছে, অর্থের পিছনে ছুটছে আবার অনেকে জীবনযুদ্ধে ছুটছে, মানুষ চিরন্তন ছুটে চলছে।
তিনি বলেন, মানুষ যে অবসর সময়টুকু পায় এখন সেই অবসর সময়টুকু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু একটি বই মানুষের জীবনে কি পরিবর্তন আনতে পারে এবং মানুষের মননশীলতা বিকাশের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের সুকোমল বৃৃত্তিগুলো বিকশিত করার ক্ষেত্রে, কিংবা জীবনকে পাল্টে দেয়ার ক্ষেত্রেও একটি বই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শিশু-কিশোরদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা একইসাথে সঠিক বই পড়তে দেয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, শত প্রতিকূলতার মাঝে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একুশে বইমেলার আয়োজন করেছে। এতে চট্টগ্রামের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহায়তা ছিল বলেই এ উদ্যোগ সফল হয়েছে। তিনি বলেন, মেলায় পাঠকের সমাবেশ ঘটেছে, তাতে বইয়ের প্রতি পাঠকের যে আগ্রহ বেড়েছে তা সহজেই অনুমেয়। আগামীতে মেলার পরিধি বাড়াতে দক্ষিণ পার্শের রাস্তা বন্ধ রাখতে মন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা আমলে নেয়া হবে।
এদিকে গতকালও বেশ কয়েকটি বইকে ঘিরে পাঠকের আগ্রহ দেখা গেছে। এর মধ্যে কাজী এম. আনিছুল ইসলাম, সাইফুল সামিন এবং মো. সুমন আলীর ‘অনলাইন সাংবাদিকতা পাঠ ও প্রয়োগ’, অমিত বড়ুয়ার ‘ছুটি শেষে ভালোবেসে’, আবসার মাহফুজের ‘দশে মিলে দেশ গগি’, হৃদয় হাসান বাবুর ‘নীল ছোঁয়া’ ও বিভা ইন্দুর ‘এক চিলতে ভেজা উঠোন’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গোপসাগরে ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি মালামাল লুট, ১৬ জেলে আহত
পরবর্তী নিবন্ধদুর্যোগে ঝুঁকি মোকাবিলায় ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড মহড়া অবদান রাখবে