বিদায় অঞ্জনা

| রবিবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ থেকে চিরবিদায় নিলেন সত্তর ও আশির দশকের ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। ‘পরিণীতা’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এই নায়িকা এক সময় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ছিলেন অতি পরিচিত মুখ। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়।

অঞ্জনাকে বুধবার রাত থেকে হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার রাত ১টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে অভিনেত্রীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও অভিনেতা সনি রহমান। এর আগে চলচ্চিত্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনবিএফডিসি এবং চ্যানেল আইয়ের প্রাঙ্গনের অঞ্জানার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিডিনিউজের।

অভিনেত্রীর ছেলে নিশাত রহমান জানান, জ্বর হওয়ার পর বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে রক্তের সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে কিছুটা উন্নতি হলে সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে নয় দিন চিকিৎসার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার রাতে বিএসএমএমইউ ভর্তি করা হয় অঞ্জনাকে। রক্তের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া, ফুসফুসে পানি আসা, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া, এর মধ্যেই স্ট্রোক হওয়াসহ নানা জটিলতা তৈরি হয় অভিনেত্রীর। এক পর্যয়ে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়।

ঢাকায় এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে অঞ্জনার জন্ম। ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি তার আগ্রহের কারণে বাবামা তাকে নাচ শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে তিনি ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের কাছে নাচের তালিম নেন, শেখেন কত্থক। সিনেমায় আসার আগেই অঞ্জনা পরিচিতি পান নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় কাজ শুরু করলেও তার মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’। নায়ক সোহেল রানার বিপরীতে ওই সিনেমার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি অঞ্জনাকে। নিজের সেরা সময়ে ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির প্রায় সব নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন তিনি। নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে ৩০টি সিনেমায়, যার মধ্যে রয়েছেঅশিক্ষিত, রজনীগন্ধা, আশার আলো, জিঞ্জির, আনারকলি, বিধাতা, বৌরানী, সোনার হরিণ, মানা, রামরহিমজন, সানাই, সোহাগ, মাটির পুতুল, সাহেব বিবি গোলাম ও অভিযানএর মত দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্র। এছাড়া ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী; পাকিস্তানের অভিনেতা ফয়সাল, নাদীম, জাভেদ শেখ, ইসমাইল শাহ; নেপালের শীবশ্রেষ্ঠ ও ভুবন কেসির সঙ্গেও অভিনয় করেছেন এই নায়িকা।

চার দশকের ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। ‘পরিণীতা’ সিনেমার জন্য ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পাশাপাশি বাচসাস পুরস্কার এবং নৃত্যে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। ১৯৯২ সালের পর থেকে সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে যান অঞ্জনা। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় তার সর্বশেষ সিনেমা ‘ভুল’। অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে গেলেও তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘অঞ্জনা ফিল্মস’ থেকে ‘প্রাণ সজনি’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’, ‘চালু সরদার’সহ অনেকগুলো সিনেমা মুক্তি পায়। পর্দায় সক্রিয় না হলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিয়মিতই যাতায়াত ছিল তার। সর্বশেষ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

গতকাল সকাল সোয়া ১১টায় অভিনেত্রীর মরদেহবাহী গাড়িটি যখন এফডিসিতে প্রবেশ করে, অভিনেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে সেখানে আরো আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন অভিনেতা আলমগীর, উজ্জল, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, চিত্রনায়িকা নূতনসহ চলচ্চিত্রের মানুষেরা। বিএফডিসিতে চিত্রনায়িকাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে চোখের জলে বিদায় জানিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। জোহরের নামাজের পর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে জানাজা শেষে সেখান থেকে অভিনেত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে। সেখানে দুপুর আড়াইটার আগ দিয়ে আরেকবার জানাজা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকী কী করলে ভালো নির্বাচন হয়, ঠিক করুন : মান্না
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে কোস্টগার্ড-মাদক কারবারি গোলাগুলি, নিহত ১