বিদায়ী চেয়ারম্যানের নির্দেশনা প্রত্যাহার, থাকছে ফ্লোর প্রাইস

| সোমবার , ১২ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ারদরে সর্বনিম্ন সীমা বা ফ্লোর প্রাইস সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস থেকে উঠে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতইসলামের দেওয়া এ সংক্রান্ত নির্দেশনাটি গতকাল রোববার সকালে প্রত্যাহার করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, চিঠি প্রস্তুত করা হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবারে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার যে আদেশ হয়েছিল, তা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যকর না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে। ফ্লোর প্রাইস নিয়ে শেয়ারদর আটকে রাখা হয়েছে, এমন ছয়টি কোম্পানির মধ্যে তিনটির প্রত্যাহার হওয়ার কথা ছিল গতকাল রোববার। এগুলো হল বেক্সিমকো লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার ও শাহজিবাজার পাওয়ার। বাকি তিন কোম্পানি বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কথা ছিল বুধবার।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতউলইসলাম। চিঠি দেয়ার বিষয়টি কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়েছিলেন সংস্থাটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চেয়ারম্যান অফিস না করলেও দাপ্তরিক আদেশে কীভাবে সই করেছেন, তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বিএসইসির কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তার কাছ থেকে। সরকার পতনের পর সরকারিবেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় গত শনিবার পদ ছাড়েন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতউলইসলাম। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে তার আদেশ বাস্তবায়ন না করতে গতকাল দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে মৌখিক নির্দেশ দেয় কমিশন। এতে গতকাল থেকে কোনো কোম্পানির উপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়নি দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। বিভিন্ন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের ট্রেডারও জানিয়েছেন সে তথ্য।

দেশের বড় পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কোনো নির্দেশনা আমরা রোববার (গতকাল) সকাল পর্যন্ত পাইনি। ডাক বা ইমেইলেও কোনো আদেশ আসেনি। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক গ্রুপে একটি চিঠি দেখতে পেয়ে আমরা বৃহস্পতিবার রাতে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করি। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অফিসিয়াল চিঠি না পেলে ফ্লোর প্রাইস তোলা হবে না। আমরা সেভাবেই লেনদেন শুরু করেছি।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব পেয়ে শেয়ারদরে পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বে কমিশন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বাজারে ধসের মধ্যে আবার একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এভাবে কৃত্রিমভাবে শেয়ারদর ধরে রাখার চেষ্টা নিয়ে অবশ্য সমালোচনা ছিল। দর ধরে রাখলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। এরপর ধাপে ধাপে কোম্পানিগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হতে থাকে। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ছয়টি কোম্পানি বাদ দিয়ে সবগুলোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়। এরপর পুঁজিবাজারে ফের দরপতন হতে থাকে। সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর পতন আরও ব্যাপক হয়। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পর ধস পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে সরকার পতনের পর তিন কর্মদিবসে ব্যাপক উত্থান দেখে পুঁজিবাজার। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার শপথ নেওয়ার দিন রেকর্ড ৩০৬ পয়েন্ট সূচক বাড়ে। এতে বিনিয়োগকারীদের লোকসান কিছুটা হলেও কমে আসছে। সেই সঙ্গে বাজারে ফিরছে টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্বে নূরুন নাহার