বিটুমিন সংকট, জোড়াতালি দিয়ে চলছে সড়ক সংস্কার কাজ

প্রকৃত ঠিকাদারদের বিটুমিন সরবরাহ না দিয়ে নাম সর্বস্ব বিভিন্ন ব্যক্তিকে দেয়ার অভিযোগ

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

নির্মাণকাজের অপরিহার্য উপকরণ বিটুমিনের তীব্র সংকটে দেশের রাস্তা ঘাট নির্মাণ কাজ মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর দপ্তরে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েও এক ড্রাম বিটুমিন জোটানো যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানই ভুগছে বিটুমিনের অভাবে। নষ্ট হয়ে যাওয়া বহু সড়কের পিচ ঢালাই দেয়া যাচ্ছে না বিটুমিনের অভাবে। চাহিদার এক চতুর্থাংশ বিটুমিনও জুটে না সিটি কর্পোরেশনের। বিটুমিন সংকটের সুযোগে দেশের কয়েকটি বেসরকারি আমদানিকারক নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করে দেশে বাজারজাত করছে। যা দিয়ে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে ঢালাই দেয়া হলেও অল্প সময়ের ব্যবধানে রাস্তার পিটের চামড়া চলে যাচ্ছে। বিটুমিন সংকটকে পুঁজি করে সংশ্লিষ্ট তেল বিপণন কোম্পানির অসাধু কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকার বেসাতি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, রাস্তাঘাট নির্মাণের অপরিহার্য উপকরণ বিটুমিন। বিটুমিন ছাড়া পাকা রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় দুই লাখ টনের মতো বিটুমিন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু দেশে বছরে মাত্র ৬০ হাজার টন বিটুমিন উৎপাদিত হয়। দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি বিটুমিন উৎপাদন করে থাকে। ক্রুড অয়েল রিফাইনড করে জ্বালানি তেল উৎপাদনের এক পর্যায়ে বিটুমিন উৎপাদিত হয়।

দেশের চাহিদার বাকি বিটুমিন ইরান এবং সৌদি আরবসহ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে বেসরকারিভাবে বিটুমিন আমদানি হয়। তবে গত বেশ কিছুদিন যাবত বিটুমিনের তীব্র সংকট চলছে। আন্তর্জাতিকভাবেও বিটুমিনের সংকট দেখা দিয়েছে। বহু দেশই বিটুমিন উৎপাদন না করে ফার্নেস অয়েল তৈরি করছে।

বিপিসির নিয়ন্ত্রাণাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যমুনা অয়েল কোম্পানি এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম বিটুমিন বাজারজাত করে। ইস্টার্ন রিফাইনারির উৎপাদিত অত্যন্ত মানসম্মত বিটুমিন বাজারজাত করে উক্ত তিনটি তেল বিপণন কোম্পানি। কিন্তু দিনের পর দিন লাইন দিয়ে থেকেও সহজপথে এক ড্রাম বিটুমিন মিলানো যায় না। বাড়তি অর্থ খরচ করে সংস্থান করতে হচ্ছে বিটুমিনের।

সূত্র বলেছে, বিটুমিন সংকটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার রাস্তা নির্মাণ ও সংস্থার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী জানিয়েছেন, কর্পোরেশনের প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ বাউজার বিটুমিনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু পুরো মাসেও কর্পোরেশনকে ১০ বাউজার বিটুমিন সরবরাহ দেয় না ইস্টার্ন রিফাইনারি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সড়ক সংস্কার কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে দায়িত্বশীল ওই প্রকৌশলী বলেন, বৃষ্টির জন্য বহুদিন সড়ক সংস্কার বা পিচ ঢালাইয়ের কাজ করা সম্ভব হয়নি। গত বর্ষায় নষ্ট হওয়া সড়কগুলো শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর সংস্কারে হাত দেয় কর্পোরেশন। কিন্তু বিটুমিনের অভাবে এই কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে চলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে বিদেশের আমদানিকৃত বিটুমিন পারতপক্ষে ব্যবহার করে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলোর মান আমাদের প্রত্যাশানুযায়ী থাকে না।

বিদেশ থেকে নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি হয় বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন প্রকৌশলী বলেন, আমদানিকৃত অনেক বিটুমিনের মান খুবই খারাপ। এগুলো দিয়ে কাজ করা আর না করা একই। আবার কেউ কেউ বিদেশ থেকে গুণগত মানসম্পন্ন বিটুমিন এনে বাড়তি মুনাফার লোভে নানা প্রক্রিয়ায় বিটুমিনে ভেজাল দেয়, যাতে মান নষ্ট হয়ে যায়।

অপরদিকে বিটুমিন সংকটকে পুঁজি করে তেল বিপণন কোম্পানিগুলোতে রমরমা দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকৃত ঠিকাদারদের বিটুমিন সরবরাহ না দিয়ে নাম সর্বস্ব বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিটুমিন দেয়া হচ্ছে। পরে চড়া দামে এসব বিটুমিন বাজারে বিক্রি করে ভাগ বাটোয়ারা চলছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এই ধরণের একজন ব্যবসায়ী জানান, আমরা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে বিটুমিন সংগ্রহ করি। যা আমরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করি।

বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিটুমিনের প্রচন্ড চাপে থাকি। কত ধরণের চাপের মুখে যে পড়তে হয় তা প্রকাশ্যে বলতে পারছি না। আমরা বাধ্য হয়ে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে বিটুমিন দিতে বাধ্য হই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধভোরের আগুনে নিভে গেল দাদি-নাতনির প্রাণ