বাঙালির চিরদিনের গৌরব, অসমসাহস, বীরত্ব ও আত্মদানে মহিমান্বিত অর্জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে সেই সব শহীদকে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। স্মরণ করবে সেইসব বীর সেনানীকে যারা শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। আমাদের মুক্তি যুদ্ধটা ছিলো একটি জনযুদ্ধ। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ও পেশার মানুষ, নারীপুরুষ নির্বিশেষে পাকিস্তানি সরকারের পরিচালিত গণহত্যায় প্রাণ হারিয়েছিলো, নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, বাস্তহারা হয়েছিলো। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই আমাদের জনগণ কেউ অস্ত্র, কেউ সহায়কের ভূমিকায় এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল দেশ স্বাধীন করা। আরো বড় লক্ষ্য ছিলো এ দেশের মানুষ যারা বহু শতাব্দী ধরে নিপীড়ন ও শোষণের জালে আবদ্ধ, তাদের মুক্ত করা। কিন্তু বাংলার শোষিত বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বুটের তলায় স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর এক অপারেশনের নামে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। আলোচনার টেবিলে শান্তি পূর্ণ সমাধানের পথ পরিত্যাগ করে তারা বন্দুকের নল আর কামানের গোলা বেছে নেয় সমাধানের পথ হিসেবে। যুদ্ধ চাপিয়ে আমাদের ওপর। নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষকে নির্বিচারে হত্যায় মেতে ওঠে অস্ত্রের জোরে বলীয়ান সামরিক শাসকগোষ্ঠী। শুরু হয় মুক্তির লড়াই, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ। ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের তাৎপর্যে জগৎ জাতিসভায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে স্বাধীনচেতা মনোভাবকে বাংলাদেশীদের জাতিসত্তার বিকাশকে আরো অর্থবহ ও মহিমান্বিত করেছে। এ বিজয় সীমাহীন শোষণ ও সুদীর্ঘকালের অবজ্ঞায় নিষ্পেষিত ঔপনিবেশিক জীবন যাত্রা থেকে মুক্তি পেয়ে তারা তাদের চলার, নিজের পায়ে নিজের দাঁড়ানোর বাঁচার অধিকার পেয়েছে বাংলাদেশীদের অর্থনৈতিক জীবনযাত্রায়, সংস্কৃতিক জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। ৭১ সালের বিধস্ত বাংলাদেশকে একটি সুন্দর প্লাটফর্মে দাঁড় করিয়েছে। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়ও নাম লিখিয়েছে। বিগত বছরগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করে তা থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হবে। শপথ নিতে হবে সুখী সমৃদ্ধ কল্যাণকর সমাজ গঠনের। ব্যর্থতার ভিতে গড়ে উঠুক সাফল্যের মিনার।












