করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় প্রায় দশ মাস ধরে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে সরকার। ক্লাস বন্ধ রাখার পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে সব ধরনের পরীক্ষা।
ভর্তি পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমেই সব ক্লাসে ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনা করছে মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর)। করোনা ঝুঁকির মধ্যে কেবল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এতসব সিদ্ধান্ত সরকারের।
কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে গিয়ে পরীক্ষায় বসতে হল নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। গতকাল নগরীর নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘটনা এটি। আগের দিন স্কুলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নোটিশ আকারে ঘোষণা দিয়েই এ পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। গতকাল সকাল দশটা থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে এ পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখা যায়। স্কুলের দুটি কক্ষে এ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল। অষ্টম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে ২৫ নম্বর করে মোট ৫০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়েছে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিতে ইচ্ছুক এসব শিক্ষার্থীর।
পরীক্ষা গ্রহণের কথা স্বীকার করলেও নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম হোসাইনীর দাবি- সবাই বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চায়। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য নূন্যতম যোগ্যতার মতো একটি ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করেছি। যেহেতু ক্লাস এইটে পরীক্ষা হয়নি, সেহেতু এর আগের বছর ক্লাস সেভেনে যারা গ্রেড পয়েন্ট ৩.৭০ বা এর ঊর্ধ্বে পেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল, তাদের সবাইকে নবমে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে নির্ধারিত পয়েন্ট না পাওয়া কিছু শিক্ষার্থীও বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চায়। সেসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের আগ্রহেই মূলত সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ওনারাই (অভিভাবকরা) বলেছেন- ছেলেদের কাছ থেকে প্রয়োজনে যাতে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সে হিসেবে আমরা গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন পরীক্ষা নিচ্ছি। ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী যারা আসছে, তাদের কাছ থেকেই এ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে এক বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে এ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম হোসাইনী।
তবে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানিয়েছেন- ছেলে বিজ্ঞান পড়তে চাইলেও স্কুলের নিয়মের কারণে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারছে না। বিজ্ঞান নিতে আগ্রহীদের স্কুলের পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে বলা হয়েছে। যার কারণে ছেলেরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)’র কর্মকর্তারা বলছেন- পরীক্ষা নিয়ে বিভাগ নির্ধারণ করে দেওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সরকার সব ধরণের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে। সেখানে বিভাগ নির্ধারণের জন্য এই সময়ে পরীক্ষা নেয়া হলে তা সরকারের সিদ্ধান্ত পরিপন্থী। অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।