বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই : নাহিদ

দুই ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক নেই

| রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে দলগুলোর মতানৈক্যের মধ্যে একই সঙ্গে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, রাষ্ট্রের সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপি। গতকাল শনিবার বাংলামোটর রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে এমসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। খবর বিডিনিউজের।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান মিত্র দল বিএনপির সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। ছাত্রদের নতুন দলটি বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দিলেও বিএনপির চাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। গত কয়েকদিনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে আলোচনার মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে গণ অভ্যুত্থানের পথ ধরে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার তৈরি হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতা রয়েছে। কেবল একটি নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং জুলাই গণহত্যাসহ বিগত আমলের অপরাধগুলোর বিচার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের মধ্য দিয়েই সরকারকে যেতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্বে থেকেই সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের ব্যবস্থা করা উচিত। বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ একই সঙ্গে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে জনগণের স্বস্তি ও আস্থা তৈরি হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশের বিষয় নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা পদ ছেড়ে রাজনীতিতে আসা নাহিদ। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের একটি তালিকার কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম। এটা গত ১৮ আগস্টের ঘটনা। এই তালিকাটা যদি আরও আগে প্রকাশ করা হতো তাহলে জনমনে সন্দেহশঙ্কা তৈরি হতো না এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারো কথা বলার সুযোগ হতো না।

গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি। নাহিদ বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর সাথে রাজনীতির একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যেমন ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা। এসব ঘটনা রাষ্ট্র, জনগণ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কখনো ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সেই বিষয়টা বিবেচনায় রেখে যার যেটা কাজ সে যেন সেই দায়িত্ব পালন করে। বিগত আমলে আমলাতন্ত্র, পুলিশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে নানা ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে। ফলে এই সময়ে এসে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্তদের বিচারের মধ্য দিয়ে শায়েস্তা করা হবে এবং জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

গুমের অভিযোগ যেসব সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে রয়েছে তাদের অনেকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের অবস্থা এখন কী সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বিষয়গুলো স্পষ্ট করলে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনী জনগণের আরো আস্থার জায়গা পাবে। আমরা সেনাবাহিনীকে সেই আস্থার জায়গায় দেখতে চাই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন নিয়ে এনসিপিবিএনপির দ্বন্দ্ব এখন মাঠের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আদালতে গিয়ে আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলোর এক ধরনের বৈধতা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী আমলের নির্বাচনগুলোকে অবৈধ মনে করি। ফলে সেই নির্বাচন নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে আমাদেরকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা হারিয়েছে দাবি করে নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি আস্থার জায়গা ধরে রাখতে না পারে তাহলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জন করতে হবে অন্যথায় দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। এনসিপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা দুই ছাত্র উপদেষ্টার সংশ্লিষ্টতার কথা বলে তাদের পদত্যাগের যে দাবি উঠেছে, সে প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ওই দুই ছাত্র উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির কোনো সম্পর্ক নেই। গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সেই সময় তারা সরকারে গিয়েছিলেন, আমিও গিয়েছিলাম। তারা যদি রাজনীতি করতে চায়, নির্বাচন করতে চায় তাহলে সরকার থেকে বেরিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তাদেরকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সাথে সংযুক্ত করে এক ধরনের অপপ্রচার ও তাদেরকে হেয় করা হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে প্রতিনিধি হিসেবে শহীদ পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন, খুনিদের বিচার এবং সংস্কার বাস্তবায়ন করার জন্যই তারা গিয়েছে। ফলে সরকার থেকে তারা কখন বের হবে, কিংবা আদৌ হবে কি না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচীনে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে গোলাম আকবরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল
পরবর্তী নিবন্ধগ্রাহক প্রতি ১০টির বেশি সিম নয়