রাজধানী ঢাকার পর গত সোমবার চট্টগ্রামেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ই–পারিবারিক আদালতের উদ্বোধন হয়েছে। তবে আপাতত নগরীর সদরঘাট, কোতোয়ালী, চকবাজার ও কর্ণফুলী থানা এলাকার বাসিন্দারা এর আওতায় থাকছেন। পরবর্তীতে অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও এ কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারবেন। কোর্টহিলের জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে ই–পারিবারিক আদালতের কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। মামলা দায়ের থেকে শুরু করে রায় ঘোষণাসহ পারিবারিক বিরোধের প্রতিটি ধাপই পরিচালিত হবে অনলাইনে। আদালতে না গিয়ে ঘরে বসেই মিলবে সবরকম সেবা। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পারিবারিক বিরোধ দ্রুত, স্বচ্ছ ও কম ঝামেলায় নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চালু করা এই ডিজিটাল কোর্টকে দেশের বিচার ব্যবস্থার আধুনিকায়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সহজ ও সময়োপযোগী সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। ই–ফ্যামিলি কোর্ট তারই বাস্তব রূপ। তিনি আরও জানান, প্রযুক্তিনির্ভর বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হবে এবং বিচারপ্রার্থীদের অযথা ভোগান্তি কমবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ বিচার বিভাগে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের যথাযথ অগ্রগতি নিশ্চিত করতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ালে বিচার সেবার মান আরও উন্নত হবে। ই–ফ্যামিলি কোর্টের মতো উদ্যোগ তার সঠিক উদাহরণ। তিনি আরও যোগ করেন, জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সহজ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব সংস্থার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হেমায়েত উদ্দিন। তিনি বলেন, ই–ফ্যামিলি কোর্ট পারিবারিক মামলার ঝামেলা অনেকাংশে কমিয়ে আনবে। ভিডিও কনফারেন্স ও অনলাইন ডকুমেন্ট সাবমিশনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া হবে সহজ, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিচার বিভাগের নানান সংস্কার হয়েছে। আইনের পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারের বিষয়টিও আশাজাগানিয়া। এর মধ্যে কোর্ট অটোমেশন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নারায়ণগঞ্জ জেলায় ই–বেইলবন্ড কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এ অটোমেশন প্রক্রিয়ার যাত্রা শুরু হয় নভেম্বরের ১৮ তারিখে। যাত্রা শুরুর পর থেকে এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গতির কারণে এ উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে। আইনজীবীরাও একে স্বাগত জানিয়েছেন। সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিচারপ্রার্থী জনগণ। ১ ডিসেম্বর থেকে আটটি বিভাগীয় শহরে ই–বেল বন্ডের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশে বিচার বিভাগ অটোমেশনের পরবর্তী সংযোজন ছিল ই–পারিবারিক আদালতব্যবস্থা। এখানে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে আইনজীবী নির্বাচন, অনলাইনে কোর্ট ফি দেওয়া, হাজিরা দেওয়া, বিভিন্ন দরখাস্ত দাখিল, সাক্ষ্য গ্রহণ, মামলা ব্যবস্থাপনা, নথি ব্যবস্থাপনাসহ একটি মামলার সার্বিক কার্যক্রম এখন অনলাইনে হবে।
এখন আর কোর্ট–কাচারিতে শুধু হাজিরা দেওয়ার জন্য যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অনলাইনেই হাজিরা দেওয়া যাবে। মামলার প্রতি তারিখ খুদে বার্তা ও ই–মেইলের মাধ্যমে জানতে পারবেন মামলার সংশ্লিষ্ট সবাই। আদালতের কর্মচারীদেরও এখন থেকে আর একই কাজ বারবার করতে হবে না। কোর্টের রেজিস্ট্রারসহ নথি বিভাজন সবই হবে কম্পিউটারে ক্লিকের মাধ্যমে। ই–পারিবারিক আদালত ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন শুধু আদালতকে আধুনিকায়ন নয়; এটি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলা।
এই বিশাল যজ্ঞে যারা সব সময় পাশে ছিল, তাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপে বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করার বিষয়টি ছিল অন্যতম। সুপ্রিম কোর্ট দিকনির্দেশনার পাশাপাশি কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী দিয়ে এই যাত্রাপথকে সহজ করেছে।
আসলে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে আইনজীবী সমাজেরও সর্বাত্মক সহযোগিতা দরকার হবে। আশা করছি, ই–পারিবারিক আদালতে আইনজীবীদের কাজ আরও গতিশীল হবে এবং বিচারপ্রার্থীরা এর প্রত্যক্ষ সুফল পাবেন।







