বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ছাড়া রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিচারকদের অভিমত

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৪ মে, ২০২৫ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ছাড়া রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিচারকরা। গতকাল নগরীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাথে চট্টগ্রাম বিভাগের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় রাখা বক্তব্যে বিচারকরা এ কথা বলেন।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল১ এর বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম (জেলা ও দায়রা জজ)। চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত ১১টি জেলার বিভিন্ন স্তরের বিচারকরা এ সভায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বক্তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। বিচারকার্য পরিচালনায় অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দকে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে বক্তারা জেলা আদালতের বিচারকদের প্রশাসনিক বিষয়ে যেমন নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের আওতায় আনার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি, বিচার বিভাগ পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা পুনরায় জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়।

সভায় ‘মাসদার হোসেন মামলার’ ৬ নম্বর নির্দেশনার আলোকে বিচারকদের জন্য একটি পৃথক ও স্বাধীন পেকমিশন গঠনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। বক্তারা বলেন, বিচারকরা সংবিধান রক্ষার গুরু দায়িত্ব পালন করেন বিধায় তাদের আর্থিক সুবিধা ও সম্মানী সেই দায়িত্বের গুরুত্ব ও মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিৎ। এই লক্ষ্যে বিদ্যমান বেতন কাঠামোর অতিরিক্ত ৩০% হারে বিচারিক ভাতা বকেয়াসহ প্রদানের এবং একটি নতুন পেকমিশন গঠন করে শতভাগ বিচারিক ভাতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জেলা আদালতের বিচারকদের প্রতি যে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়, তা নিরসনের প্রয়োজনে বক্তারা জ্যেষ্ঠতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জেলা আদালতের বিচারকদের উচ্চ আদালতে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান। বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন ও স্বাধীনতা রক্ষায় অ্যাসোসিয়েশনকে একটি সক্রিয় ও কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে বক্তারা ‘ইয়ং জাজেস ফোরাম’এর সাহসী ও গতিশীল ভূমিকাকে আন্তরিকভাবে স্বীকৃতি দেন ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রত্যাশা করা হয় যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগের কাঠামোগত ও প্রশাসনিক সংস্কারে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ছাড়া রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সে প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধান বিচারপতির ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করা হয়। সভার সমাপ্তিতে উপস্থিত বিচারকরা একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং কার্যকর বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে কে সি দে ইনস্টিটিউট সুনাম যুগিয়েছে