আওয়ামী লীগ আমলের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আর সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন হলে তা আরেকটি জাতীয় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় একটি হোটেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, আমাদের শহীদরা এবং জীবন্ত শহীদরা আমাদের অ্যাসেট। তারা আমাদের বোঝা নয়। এই স্বীকৃতি আমাদেরকে দিতে হবে। আমাদের সম্পদকে মুখে নয়, বাস্তবেই সম্মান দেখাতে হবে।
সরকার ও জাতিকে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত করতে হলে তিনটা জিনিস প্যারালাল চলতে হবে। বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন। কিন্তু বিচার আর সংস্কারের আগে যদি কোনো নির্বাচন হয়, তাহলে সেটি আরেকটা ন্যাশনাল ডিজাস্টার হতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি। খবর বিডিনিউজের।
গত ২৬ জুলাই চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের এক আয়োজনে শোনা বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে জামায়াত আমির বলেন, সেখানে সবাই বলেছেন, বিচার না দেখা পর্যন্ত তারা কোনো নির্বাচন দেখতে চান না। আন্দোলন দমাতে গিয়ে যে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হাজারো মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে, তার সব ঘটনার বিচার নির্বাচনের আগে সম্ভব না হলেও যারা জঘন্য অপরাধী তাদের অন্তত দুই চারটা বিচার হলেও দেখতে চাওয়ার কথা বলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং মিশন যে ফ্যাক্টসগুলো তুলে এনেছে, তার সাথে যেগুলা অপূরণ আছে সেগুলাকেও সংযুক্ত করে বিচারটা ঠিকমত হোক। তবে আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলব, যে অবিচার আমাদের উপর করা হয়েছে, দল হিসাবে আমাদের নেতৃবৃন্দকে খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতে– এ ধরনের কোনো বিচার দেখতে চাই না।
জামায়াত আমির বলেন, বিচারটা যেন শতভাগ ট্রান্সপারেন্ট এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে হয়। পার্সোনালি আমি বিশ্বাস করি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে কোনো অপরাধী পার পাবে না ইনশাআল্লাহ। যারা মানুষ খুন করেছে, তারা তাদের ন্যায্য পাওনাটা বুঝে পাবে এবং বিচারহীনতার অথবা বিচারকে ধামাচাপা দেওয়ার যে সংস্কৃতি সেটা দূর হবে। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতা থাকবে। জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা সরকার পরিচালনা করার সুযোগ পাই অথবা আমরা বিরোধী দলে থাকি, এ বিষয়ে আমাদের ভূমিকা হবে স্পষ্ট ন্যায্য এবং অকুতোভয়।
শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন– এই কথা শুনতে শুনতে তার কান দুটো প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটারও অবসান ঘটুক এবং সত্যিকার অর্থেই জুডিশিয়ারি স্বাধীন হোক। জুডিশিয়ারিটা পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করুক, তাহলে আমরা মিনিমাম ন্যায়বিচার পেতে পারি বলে আশ্বস্ত হব।