চলমান কোট সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ‘গণগ্রেপ্তার’ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন দেশের বিনোদন শিল্পীদের একটি অংশ। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। একই সময়ে শিল্পীদের আরেকটি অংশ রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনে সমাবেশ করে সকল প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। খবর বিডিনিউজের।
বিটিভিতে ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি এবং ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা ও হত্যার বিচার দাবি করেন তারা; ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি প্রাঙ্গণও ঘুরে দেখেন।
‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’ এর ব্যানারে আয়োজনটি বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের বাধায় সেখানে তারা যেতে পারেননি। পরে তারা ফার্মগেটে তেজগাঁ কলেজের উল্টোদিকের ফুটপাতে দাঁড়িয়েই বিক্ষোভ করেন।
এ সময় বৃষ্টি শুরু হলেও সমাবেশ চালিয়ে যান শিল্পীরা। চলচ্চিত্র, থিয়েটার, আলোকচিত্রশিল্পীরা সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেন। অভিনেতা, নাট্যকার মামুনুর রশীদ সেখানে বলেন, ‘জুলাই মাসব্যাপী যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে যে প্রাণ গেছে, তার মাঝে শিশুরাও রয়েছে। এই বেদনা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানাই এবং বিচার দাবি করি।’
অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা বলেন, ‘আমি সারাজীবন শিশুদের নিয়ে, শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেছি। যেটি হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। আমি চাই, যে ঘটনা হয়েছে– তার সুষ্ঠু বিচার হোক।’
অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন বলেন, ‘যে রাষ্ট্র নির্বিচারে গুলি চালায়, যে রাষ্ট্র মানুষ হত্যা করে– সেই রাষ্ট্র কখনোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি হতে পারে না। যে মানুষ মরেছে, আজকে তাদের জায়গায় আমি–আপনি থাকতে পারতাম। এই হত্যার দায় রাষ্ট্রের নিতে হবে।’
বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলে স্লোগান– ‘দিনে নাটক রাতে আটক/ চলবে না চলবে না’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক/স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’। আলোকচিত্রী মুনেম ইউসুফ বলেন, ‘আমরা দেশের ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছি, যেখানে মানুষ তার কথা বলতে পারছে না। আমরা কার কাছে বিচার চাইব? আমরা এমন এক রাষ্ট্রে দাঁড়িয়েছি, যেখানে মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলতেও ভয় পায়। আমরা মানবিক মর্যাদার এক বাংলাদেশ দেখতে চাই।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান বলেন, এত তরুণ প্রাণ মারা গেছে, আমরা বয়স্করা এখানে দাঁড়িয়েছি। এর চেয়ে লজ্জার কী আছে? এ দায় আমাদের নিতে হবে। আমাদের সন্তানদের আমরা রক্ষা করতে পারলাম না। এর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
অন্যদের মধ্যে অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, নির্মাতা পিপলু আর খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, অভিনেতা মোশাররফ করিম, ইরেশ যাকের ছিলেন এ কর্মসূচিতে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনে সমাবেশে ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল তার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদেরকে ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে–পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে। দেশটি হয়ত আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলব, কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো আর আমরা আর কোনোদিন ফিরে পাব না।
বিটিভিতে আগুন কেন সেই প্রশ্ন তুলে ফেরদৌস বলেন, আজকে আমরা বিটিভিতে এসেছি। আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সে বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নিসন্ত্রাসী কারা? তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে।
অভিনেত্রী শমী কায়সার বলেন, যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। সেরকম একটি মাসে আমরা এই প্রতিবাদ সমাবেশে দাঁড়াব, এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্বরে– সেটা আমাদের জীবদ্দশাতে কখনো ভাবিনি।
অন্যদের মধ্যে অভিনেত্রী সুজাতা, অভিনেতা রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, তানভীন সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।