বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ নেই

জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভায় বক্তারা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ মে, ২০২৫ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা ও প্রতিবন্ধকতা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলাম, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ এস এম বদরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস এম নছরুল কদির, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ এবং সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ। সভায় বক্তারা বলেন, আইনের শাসন হলো সেই নীতি যা নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্রের সকল কর্মকাণ্ড আইন দ্বারা পরিচালিত হবে এবং নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষিত হবে। আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান। বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ নেই।

বক্তারা বলেন, একটি ন্যায়ভিত্তিক বিচার আদালতের কাজ হল নিরপেক্ষভাবে ও দ্রুততার সহিত মামলা অর্থাৎ বিরোধের মীমাংসা নিশ্চিত করে জনগণ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুরক্ষা প্রদান করা। আমাদের সুপ্রীম কোর্টে ও জেলা আদালতসমূহকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বিচারক সংখ্যার অপ্রতুলতা ও মামলা জট ও নানাবিধ কারণে মামলা নিষ্পত্তি হতে বছরের পর বছর সময় লাগছে। বর্তমানে আদালতে ৪২ লাখের অধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যার বিচারের জন্য রয়েছে মাত্র দুই হাজার বিচারক। মামলার সংখ্যার অনুপাতে বিচারকের পদ সৃজন করে মামলার জট কমিয়ে আনা একমাত্র সমাধান। অথচ বিচারকের পদ বৃদ্ধি বা বিচারকের পদ সৃজনের ক্ষমতা বিচার বিভাগের নেই। এ ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত। তাছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আদালতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। বর্তমানে অনেক আদালতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক বিচারককে এজলাস শেয়ার করে বিচারকার্য পরিচালনা করতে হয়। যার ফলে বিচারিক কর্ম ঘণ্টার সঠিকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তবে বিচার বিভাগ চাইলেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা স্থাপন করতে পারে না। কারণ আদালতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্থাপন গ্রহণের ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত। অন্যদিকে বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক মামলা নামে খ্যাত এক বিশেষ ধরনের মামলা আবির্ভূত হযেছে। যে মামলাসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে অনেক আদালত নিরপেক্ষতা দেখাতে চরমভাবে ব্যর্থ হযেছে। এছাড়া সরকার বা সরকারে থাকা বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণকারী নির্বাহীর ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহ নিষ্পত্তির ক্ষেত্র বিচার বিভাগ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চরম বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। যার প্রধান কারণ বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পরাধীনতা। জেলা আদালতের বিচারকদের বদলি, নিয়োগ, পদায়ন ও শৃঙ্খলা বিধান বহুলাংশে নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত। শাসক শ্রেণি এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে অযাচিত প্রভাব বিস্তার করতে সচেষ্ট হয়। একইভাবে আদালতের কর্মকর্তাকর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিচার বিভাগকে অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হতে হয়।

বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের সক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করতে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আইন মন্ত্রণালযের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় মোট বাজেটের ০.৩ থেকে ০.৮ শতাংশ যা মৎস্য ও পশু সম্পদ মস্ত্রণালযের মোট বরাদ্দের চেয়েও কম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী আজ
পরবর্তী নিবন্ধউৎসবে শুরু ধানকাটা, আছে উৎকণ্ঠাও