স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় করার কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। গতকাল শনিবার সারা দেশ থেকে আসা অধস্তন আদালতের প্রায় দুই হাজার বিচারকের উদ্দেশে দেওয়া অভিভাষণে তিনি এই মত প্রকাশ করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে না, যতদিন বিচার বিভাগ নিয়ে দ্বৈত শাসন বিলোপ না হয়। অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি ও বদলিতে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব বিলোপ করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য করতে হবে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয়। বিচার বিভাগের সংস্কারে এটি প্রথম প্রচেষ্টা হবে বলে তিনি বিচারকদের আশ্বাস দেন। খবর বিডিনিউজের।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছি। তাই এই স্বাধীনতা নিশ্চিতে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় করা হবে, যা সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পরিচালিত হবে। বিচারকদের পদায়নের জন্য পৃথক নীতিমালাও করা হবে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্যও নিয়ম করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে। শঠতা, নিপীড়ন ও বঞ্চনার হাতিয়ার হিসাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে। বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের আদালতে দুর্নীতিকে কোনো প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কোনো জেলা জজ যদি তার অধীনের আদালতে দুর্নীতি নির্মূলে ব্যর্থ হন সেটা তার অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সারা দেশ থেকে আসা বিচারকদের পক্ষে নওগাঁর মুখ্য বিচারিক হাকিম বিশ্বনাথ মণ্ডল এবং খুলনার জেলা জজ মাহমুদা খাতুন বক্তব্য রাখেন।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এমন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, যেখানে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে এবং গায়েবি মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করা হবে না। ঢালাওভাবে মামলা দিয়ে হয়রানি করার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বিচারকদের দেখতে হবে অযথা নাগরিকরা যেন হয়রানির শিকার না হয়। এ সময় তিনি পূর্ববর্তী বিচারপতির দিকে ইঙ্গিত করে ছাত্র আন্দোলনকে কটাক্ষ করার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরাকে হাই কোর্ট জামিন দেওয়ার পরও আপিল বিভাগ শুনানি না করিয়ে দিনের পর দিন ঘুরিয়েছে। অথচ কোনো এক আইনজীবীর একটি বক্তব্য নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে দ্রুত শুনানি করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার মেধা, যোগ্যতা ও সততাকে মূল্যায়ন করে এবং বর্তমান প্রধান বিচারপতি নিয়োগ তার বড় প্রমাণ বলে আইন উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
নওগাঁর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল তার বক্তব্যে বিচারকদের পক্ষ থেকে ১১টি দাবি তুলে ধরেন। খুলনার জেলা জজ মাহমুদা খাতুন তার বক্তব্যে জেলা পর্যায়ে কর্মরত বিচারকদের কাজ করতে এজলাস, খাস কামরা, বিচার ভবন, যাতায়াতসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তার প্রতিকার চেয়েছেন প্রধান বিচারপতির কাছে।