বিচলিত হওয়ার কিছু নেই, এ দেশ সবার

রানা দাশগুপ্তের বাসায় নওফেল

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

দেশের বিভিন্ন স্থানে সামপ্রদায়িক হামলার ঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। দুইজনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সমপ্রতি দেশজুড়ে যে সামপ্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তা রোধে করণীয় কী হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দুইজনের কাছ থেকে জানা গেছে এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধ এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে দুজনই ঐকমত্য পোষণ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় নগরীর দেওয়ানজী পুকুর পাড়স্থ অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের বাসায় যান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বৈঠক শেষে শিক্ষা উপমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশ্বস্ত করতে চাই সমপ্রীতির বাংলাদেশে কোনো অপরাজনৈতিক শক্তি মাথাচাড়া দিতে পারবে না। বাংলাদেশে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি আছে। আমরা শন্তিপূর্ণ সহাবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি। আমরা বলব বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, এখানে ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই, এই বাংলাদেশ আমার, আপনার, সবার। আমি শ্রদ্ধেয় রানা দাশগুপ্তের উদ্বেগ এবং পর্যবেক্ষণগুলো শুনেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি ও সমপ্রীতির একটা বার্তা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আমরা সমপ্রীতি ও শান্তির সমাবেশ করছি। প্রতিটি সমপ্রদায়ের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়া যদি না থাকে, তাহলে এখানে দীর্ঘমেয়াদে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখাটা কঠিন। এটা প্রধানমন্ত্রীর বার্তা। এই বার্তা নিয়েই আমি এসেছি। আমাদের পক্ষ থেকে সমপ্রীতির বার্তা আমরা অবশ্যই দিয়ে যাব।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, যেকোনো দেশের জন্য স্থিতিশীলতা, সমাজিক শৃক্সখলা, রাজনৈতিক শৃক্সখলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আছে বলে বাংলাদেশে উন্নয়ন ও প্রগতি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হচ্ছে। কেউ যদি এটা বিনষ্ট করার অপচেষ্টা করে আমরা সেটা নস্যাৎ করে দেব। আমাদের সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নওফেল বলেন, সংক্ষুব্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক, সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দেশের যেকোনো মানুষ সংক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করতে পারেন, সেটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। সংক্ষুব্ধ সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি সংক্ষুব্ধ নয়? আমরা সরকারে থাকা অবস্থায় অপরাজনৈতিক শক্তি, সামপ্রদায়িক শক্তি যে কাজটি করেছে সেটাতে তো আমরাও সংক্ষুব্ধ। তার জন্যই আমরা সমপ্রীতি সমাবেশ করছি। তার জন্য আমরাও বিক্ষোভ করছি, আমরা প্রতিবাদ করছি ও প্রতিরোধ করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শুধু প্রশাসন দিয়ে সার্বক্ষণিক শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা কঠিন। এটা সারা পৃথিবীর বাস্তবতা। বাংলাদেশে যে ধরনের তৎপরতা আইনশৃক্সখলা বাহিনী ও প্রশাসনের আছে, তাতে অন্য জায়গা থেকে পরিস্থিতি খারাপ সেটা বলা যাবে না। তাই বিচলিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। চট্টগ্রাম শুধু নয়, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং রংপুরসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় অনেক ঘটনা ঘটেছে। সরকার শতভাগ সচেষ্ট আছে। ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, এর আগের ঘটনায়ও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দীর্ঘসূত্রতার কথা উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমি রানা দাশগুপ্ত মহোদয়কে বলেছি- তিনি একজন আইনজীবী, তিনি ভালো বুঝবেন, দীর্ঘসূত্রতা থাকলেও বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়া আমাদের সম্ভব নয়। কারণ এই দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২১ বছর পর। সুতরাং বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি দীর্ঘসূত্রতা থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ও হয়েছে। একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কথা আলোচনায় এসেছে।
তিনি আরো বলেন, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত একটা অংশগ্রহণ যাতে থাকে। আমাদের আইনশৃক্সখলা বাহিনী কাজ করছে। সেইদিনও আমাদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে এসেছিলেন এবং চট্টগ্রামে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমপ্রীতি সমাবেশ ও মিছিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে সমপ্রীতির বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এবং অঙ্গীকার অবশ্যই বাস্তবায়ন করব।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে এড. রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা ও পূজা পরবর্তী দেশজুড়ে যে সামপ্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে, সেটার বিষয়ে আলোচনা করতে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমার এখানে এসেছেন। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে-বিশেষ করে সামপ্রদায়িক সহিংসতায় যারা ক্ষুব্ধ, তাদের মনের কথাগুলো আমি শিক্ষা উপমন্ত্রীকে বলেছি।
রানাদাশ গুপ্ত বলেন, সামপ্রতিক ঘটনায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে ক্ষোভ এবং সরকারের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আমি এ কথাগুলো স্পষ্টভাবে ঊনাকে (শিক্ষা উপমন্ত্রীকে) বলেছি। মাঠে আমি যা বলেছি, সেগুলো উপমন্ত্রীকেও বলেছি। এটাও বলেছি, এই ক্ষোভ এবং দূরত্ব যদি অব্যাহত থাকে, এটা কারও জন্য শুভ হবে না, দেশের জন্য তো নয়ই। আমি উপমন্ত্রীকে বলেছি, সর্বত্রই প্রশাসনের গাফিলতি আছে এবং রাজনৈতিক দলেরও গাফিলতি আছে। আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের পাশে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা এবং কর্মীকে দেখা যায়নি।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে এই মুহূর্তে আমাদের করণীয় কী এবং কী করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ভবিষ্যতের বাংলাদেশে আমরা সবাই মিলেমিশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারব, সে বিষয়ে তার (শিক্ষা উপমন্ত্রীর সাথে) সাথে আমার কথা হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের দুইজনের মধ্যে মতের ভিন্নতা ছিল না।
রানা দাশগুপ্তের সাথে বৈঠক শেষে শিক্ষা উপমন্ত্রী নগরীর রহমতগঞ্জে জে এম সেন হলে যান। সেখানে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের সাথে কথা বলেন। গত ১৫ অক্টোবর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিনে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতি
পরবর্তী নিবন্ধকুমিল্লার সেই ইকবাল কক্সবাজারে গ্রেপ্তার