বিক্ষোভের মুখে এপিপির পদত্যাগ

আদালতে হামলার মামলায় দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালত পাড়ায় হামলা, ভাঙচুরের একটি মামলার দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা দাখিল করায় এক এপিপির (অতিরিক্ত মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর) পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। তার নাম নেজাম উদ্দিন। এ সময় বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়ারও পদত্যাগ দাবি করেছেন।

গতকাল সোমবার নতুন আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় বিক্ষোভ হয়। দুপুরে শুরু হওয়া বিক্ষোভ চলে বিকাল পর্যন্ত। বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা মহানগর পিপির কার্যালয়েও ঢুকে পড়েন এবং সংশ্লিষ্ট এপিপি নেজাম উদ্দিন ও মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন। বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এপিপি নেজাম উদ্দিন। ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হয়েও আসামি পক্ষে ওকালতনামা দাখিলের দায় নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম’ উল্লেখ করে তিনি মহানগর পিপি বরাবর পদত্যাগপত্র দাখিল করেন।

মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূইয়া আজাদীকে বলেন, এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এপিপি নেজাম যে কাজ করেছেন তার দায়ভার একান্ত তার। তিনি একসময় আমার জুনিয়র ছিলেন। বর্তমানে আমার সাথে নেই। তিনি তার মতো আইন চর্চা করছেন। তবে তিনি আমার চেম্বারে আসাযাওয়া করেন। এপিপি হয়েও তিনি যেহেতু আসামি পক্ষে ওকালতনামা দিয়েছেন সেজন্য আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেছেন। আমার কাছে নালিশ করেছেন। একপর্যায়ে এপিপি নেজাম পদত্যাগ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর আদালত পাড়ায় হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে একটি মামলার আসামি মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. নুরুর পক্ষে ওকালতনামাসহ জামিন চেয়ে দরখাস্ত দাখিল করা হয়। ওকালতনামাটি ছিল এপিপি নেজাম উদ্দিনের। যদিও দরখাস্তটি আদালতে গৃহীত হয়নি। এর আগেই সেটি ‘নট প্রেস’ হয়।

বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বলেন, আমরা মহানগর পিপিরও পদত্যাগ চাই। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করব।

আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালত পাড়ায় হামলা, ভাঙচুরের ধারাবাহিকতায় আদালতের সম্মুখে আমাদের সহকর্মী আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। এমন অবস্থায় যারা শহীদ আলিফের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই বেঈমানি করার অপচেষ্টা করেছে তাদের এবং তাদের দোসরদের আদালত প্রাঙ্গণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা উচিত।

জাহিদ হৃদয় নামে আরেক আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রের আইনজীবী হয়ে আসামি পক্ষে ওকালতনামা দাখিল এবং জামিন শুনানি করার অধিকার নেই। এটা নৈতিকতার চূড়ান্ত অবক্ষয়। বিষয়টি সাধারণ আইনজীবীদের নজরে পড়ায় বিক্ষোভ হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট এপিপি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আদালত পাড়ায় তাণ্ডবের মামলার আসামি পক্ষে ওকালতনামা দেওয়ায় আইনজীবী নেজাম উদ্দিনের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাধারণ আইনজীবীরা। তিনি একজন এপিপিও। আইনজীবী সমিতিও এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ। আমাদের নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা মানেননি। শুনেছি বিক্ষোভের মুখে তিনি পদত্যাগ করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নজরে রয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, চিন্ময় দাশের জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় সংঘর্ষ ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে খুনের ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৭৯ জনের নামে তিনটি, আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নামে একটি ও তার ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নামে একটি করে মামলা দায়ের করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে সন্ত্রাসী জানে আলম গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তার ৮ আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে