চট্টগ্রামে এবারও বিকল্প শহীদ মিনারে বিজয় দিবস উদযাপন করা হবে। পুরনো শহীদ মিনার ভেঙে নতুন শহীদ মিনার ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরির কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ। কথা ছিল এবারের বিজয় দিবসের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ৯ মাস সময় নিয়ে একবছর পার হতে চললেও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।
সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নাগরিকরা এবারের ১৬ ডিসেম্বরের আগেই নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই শহীদ মিনারের পুরো কাজ শেষ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
২৩২ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে এখনও চলমান আছে। দেড় বছর মেয়াদ বাড়ানোর পর ২০২৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরি অংশের পুরনো স্থাপনা ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও ৮তলা বিশিষ্ট মিলনায়তন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ হবে। মাঝের অংশে আগের মত শহীদ মিনারই থাকছে।
সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের দুই অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট ওপর দিয়ে একটি প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এই প্লাজা দিয়ে হেঁটে কমপ্লেক্সের উভয় অংশে চলাচল করা যাবে। শহীদ মিনার অংশে মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার এবং প্লাজা নির্মাণ করতে যে নকশা করা হয়, তাতে আগের শহীদ মিনারটির ভিত্তি ভাঙার পাশাপাশি মিনার আরও উঁচুতে স্থাপন করতে হচ্ছে। এ কারণেই পুরনো শহীদ মিনারটি সাময়িকভাবে সরাতে হবে বলে গত বছরের মাঝামাঝিতে জানায় গণপূর্ত বিভাগ। তখন তারা বলেছিল, শহীদ মিনার অংশের সব কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগেই শেষ করতে চায়। তখন সাংস্কৃতিক সংগঠকদের কেউ কেউ আপত্তি জানালেও একই নকশায় নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের আশ্বাসে তারা রাজি হয়। পাশাপাশি এবারের বিজয় দিবসের মধ্যেই কাজ শেষ করার দাবিও জানিয়েছিল তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও শহীদ মিনারের স্তম্ভ তৈরির কাঠামোই বসানো হয়নি এখনও। নিচের ভিত্তি নির্মাণের পর বেদির ঢালাই কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে শহীদ স্তম্ভ, মুক্তমঞ্চ এবং মুসলিম হল থেকে শহীদ মিনারে যাবার জন্য রাস্তার ওপর ২১ ফুট প্লাজা নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, আমরা গত বছরের নভেম্বরে শহীদ মিনারের কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে পারিনি। শহীদ মিনারের সামনে যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটা আছে সেটাও বন্ধ করতে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এ জন্য দ্রুতগতিতে কাজ করেও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারিনি।
তবে প্রকল্পের মধ্যে শহীদ মিনার অংশের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই কাজ শেষ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে।