বিএসসির দ্বিতীয় জাহাজটির ট্রায়াল রান কিছুটা পেছাল

বাংলার নবযাত্রা বুঝে নেবে আগামী মাসের প্রথমার্ধে

হাসান আকবর | রবিবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

নিজের টাকায় কেনা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) দ্বিতীয় জাহাজটির ট্রায়াল রান কিছুটা পিছিয়েছে। তবে আগামী মাসের প্রথমার্ধে এমভি বাংলার নবযাত্রা নামের জাহাজটি বিএসসি বুঝে নিচ্ছে, তা অনেকটা নিশ্চিত। চীনের শিপইয়ার্ডে নির্মিত জাহাজটির ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ট্রায়াল রান শুরুর কথা ছিল। এখন সেটি ২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সম্পন্ন করবে। এতে কোনো সমস্যা ধরা না পড়লে বিএসসি জানুয়ারি মাসের শুরুতে জাহাজটি বুঝে নেবে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনটি জাহাজ কেনার ছয় বছর পর বিএসসি চলতি বছর নতুন দুটি জাহাজ কিনল। এর মধ্যে একটি জাহাজ ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়ে চলাচল শুরু করেছে। অপর জাহাজটিও আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিশ্বের বন্দরগুলোতে পণ্য পরিবহন করবে।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক গতকাল আজাদীকে জানান, নিজস্ব অর্থায়নে কেনা দুটি জাহাজ নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। বিএসসির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিজস্ব অর্থায়নে কেনা জাহাজ দুটি আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক বেশি মজবুত করবে।

তিনি বলেন, দরপত্র আহ্বান থেকে জাহাজ বহরে যুক্ত করা পর্যন্ত মাত্র ৬ মাস সময় লেগেছে। এটিও একটি দৃষ্টান্ত। টেন্ডারে শর্ত দিয়েছিলাম, যারা কার্যাদেশ পাবেন তাদেরকে চুক্তি স্বাক্ষরের ছয় মাসের মধ্যে বিএসসির কাছে জাহাজ হস্তান্তর করতে হবে। অর্থাৎ নির্মিত বা নির্মাণাধীন জাহাজের ব্যাপারে চুক্তি করতেই টেন্ডারে এমন একটি শর্ত দিয়েছিলাম। আমাদের সেই শর্তের সুফল পাওয়া গেছে। আমরা ছয় মাসের মধ্যে দুটি বৃহদাকারের নতুন জাহাজ বহরে যুক্ত করতে সক্ষম হচ্ছি। এর মধ্যে এমভি বাংলার প্রগতি নামের জাহাজটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে চলাচল করছে। অপর জাহাজটিও আগামী মাসের শুরুতে বহরে যুক্ত হবে।

চীনের নানইয়াং শিপইয়ার্ডে প্রস্তুত জাহাজটি ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চীনের সাগরে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যার কারণে ট্রায়াল রান আগামী ২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সম্পন্ন হবে। ওই সময় জাহাজে শিপইয়ার্ড কোম্পানির বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বিএসসির বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। তারা জাহাজের খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় পরখ করে দেখবেন। এতে কোনো সমস্যা ধরা না পড়লে জাহাজটি বুঝে নেয়া হবে। আর যদি কোনো অবজারভেশন থাকে তাহলে সেগুলো ঠিক করিয়ে জাহাজ বুঝিয়ে দেয়া হবে।

বিএসসি সূত্র জানিয়েছে, ৩ জুন দুটি জাহাজ কেনার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। টেন্ডার যাচাই বাছাই শেষে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারটি অনুমোদন দেয়া হয়। ৯৩৬ কোটি টাকায় জাহাজ দুটি কেনার অনুমোদন দেয় ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি। চীনের শিপইয়ার্ডে প্রস্তুত হলেও জাহাজ দুটির সরবরাহকারী আমেরিকান প্রতিষ্ঠান হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি।

প্রথম জাহাজটির মতো দ্বিতীয় জাহাজটিরও ধারণক্ষমতা ৬৩ হাজার ৫শ টন। ১৯৯.৯৯ মিটার লম্বা জাহাজটির ড্রাফট ১৩.৫ মিটার। জাহাজটি প্রস্থে ৩২.২৬ মিটার। এই জাহাজটি যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে সাতটিতে। এর মধ্যে তিনটি জ্বালানি তেল পরিবহনের অয়েল ট্যাংকার এবং চারটি বাল্ক ক্যারিয়ার।

বহরে যুক্ত হওয়া নতুন দুটি জাহাজ থেকে বছরে অন্তত ২০০ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএসসির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুটি জাহাজে পালাক্রমে বছরে অন্তত ১৫০ জন নাবিকের কর্মসংস্থান হবে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করা বিএসসি দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ১০ জুন এমভি বাংলার দূত নামের একটি জাহাজ দিয়ে সংস্থার বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন সময় এই সংস্থার বহরে যুক্ত হয় ৪৪টি জাহাজ। বিএসসির বহরকে আরো সমৃদ্ধ করতে নিজস্ব অর্থায়নে প্রতি বছর অন্তত একটি করে জাহাজ কিনতে চায় বিএসসি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার হত্যা মামলায় সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীর জামিন
পরবর্তী নিবন্ধঅপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ চালু করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা