মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি এক চা শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কুলাউড়া থানা ওসি ওমর ফারুক মণ্ডল। এর আগে বুধবার গভীর রাত ২টার দিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে সবুজ ইসলাম (৩০) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা সীমান্তে নিহত সুখীরাম উরাং (২৫) উপজেলার মুরইছড়া চা–বাগান বস্তি এলাকার দাসনু উরাংয়ের ছেলে। ওসি ওমর ফারুক বলেন, দুপুরে সুখীরাম সীমান্তবর্তী ১৮৪৪ নম্বর পিলারের পাশে তাদের জমিতে গরু চরাতে যান। দেড়টার দিকে বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। ভয়ে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে দৌড়ে গ্রামের দিকে আসতে থাকেন। এ সময় বিএসএফের ছোঁড়া একটি বুলেট সুখীরামের পিঠে বিদ্ধ হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সুখীরামের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি ওমর ফারুক। কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের চিকিৎসক এস এস এন মাহফুজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আনার পর সুখীরামকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন তারা। তার পিঠের এক পাশে গুলির বড় গর্ত পাওয়া গেছে।
সুখীরামের কাকা মাকন উড়াং বলেন, তার ভাতিজা খুবই ভালো ছেলে। দুপুরে সে গরু চরাতে মাঠে গিয়েছিল। এ সময় ভারতের ওপার থেকে গুলি শুরু হয়। এর মধ্যে একটি গুলি সুখীরামের শরীরে লাগে। এ বিষয়ে ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ায় যুবক সীমান্তের শূন্য রেখায় গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় বিজিবি ও বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক করে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। শুক্রবার ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে একটি বৈঠক হবে।
এদিকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহতের ঘটনায় অধিনায়ক পর্যায়ের বৈঠকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। বৈঠক শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম বলেন, অধিনায়ক পর্যায়ের বৈঠকে ঘটনাটি নিয়ে আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। মরদেহ দ্রুত ফেরত চেয়েছি। জবাবে বিএসএফ দাবি করে, সবুজ ভারতীয় অংশে ঢুকে বিএসএফের ওপর হামলা চালিয়েছিল। আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়েছে।
জানা যায়, নিহত সবুজ ইসলাম (৩০) পঁচাভান্ডার গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। স্থানীয়রা জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা থানার বৈরাগিরহাট চেনাকাটা এলাকার বিপরীতে বাংলাদেশের জগতবেড় ইউনিয়নের পঁচাভান্ডার সীমান্ত এলাকা। বুধবার রাত ২টার দিকে সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৬৪–এর ৫ নম্বর উপ পিলারসংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের ৮–১০ জন গরু পারাপারকারী ভারতীয় অংশে প্রায় ৩০ গজ ভেতরে প্রবেশ করলে বিএসএফ টহল দল গুলি চালায়। এতে সবুজ ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
জগতবেড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অহেদ আলী বলেন, রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিজিবি ক্যাম্প থেকে আমাকে জানানো হয় যে একজন বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে মারা গেছে। তবে সকালে সবুজের বাড়িতে গিয়ে পরিবার–পরিজন কাউকে পাইনি। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে সবুজের একটি ছোট মুদি দোকান ছিল। এক বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই পুরো পরিবারের দেখাশোনা করতেন। দুই বছর আগে বিয়ে করা সবুজের এক বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হাবিবুর রহমান মণ্ডল বলেন, মরদেহ এখনো ফেরত দেয়নি বিএসএফ। বিজিবি নিয়মিত যোগাযোগ করছে।











