বিএম ডিপোয় উদ্ধার অভিযান শেষ

ফিরে গেছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস জেলা প্রশাসন তদন্ত টিমের পরিদর্শন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১০ জুন, ২০২২ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির বিএম কন্টেনার ডিপোর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। আগুন নিভানোর কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ায় ফিরে গেছে সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস। গতকাল বিকেলে ফায়ার সার্ভিস ডিপোতে আর কোনো দৃশ্যমান আগুন নেই বলে জানিয়ে বিদায় নিয়েছে। বুধবার রাতে বিদায় নিয়েছে সেনাবাহিনীর সকল সদস্য। তবে গতকাল বেলা তিনটা নাগাদ সরজমিনে পরিদর্শনকালে বিএম ডিপোর বেশ কিছু কন্টেনার থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, কাপড়ের কন্টেনার থেকে কিছু কিছু ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে এগুলো থেকে আর আগুন লাগার কোনো আশংকা নেই। এগুলো আপনা-আপনি নিভে যাবে বলেও তারা উল্লেখ করেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন রয়েছে। বিএম কন্টেনার ডিপোর কর্মকর্তারা ভিতরে কন্টেনার সরানোর কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। গত শনিবার রাতের পর থেকে উন্মুক্ত থাকা ডিপোর গেটও গতকাল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হয়েছে। অপরদিকে গতকাল জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ডিপো পরিদর্শন করে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে।

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির বিএম কন্টেনার ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ায় বুধবার রাতে সেনাসদস্যরা চলে যান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ কাজে সমাপ্তি ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস। তবে তারা যন্ত্রপাতি গুটিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসে দুপুর ২টায়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের নেতৃত্বে থাকা সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার নুরুল আলম দুলাল প্রেস ব্রিফিং করে কাজ সমাপ্তি করার কথা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

স্টেশনের সিনিয়র অফিসার নুরুল আলম দুলাল বলেন, সেখানে এখন ২০টির মতো কন্টেনার আছে। এগুলোর ভেতর আছে গার্মেন্ট পণ্য। এসব পণ্যে যে আগুন লেগেছিল তা এখনো জ্বলে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কিন্তু এ ধোঁয়া থেকে কোনো কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই বলে আমরা মনে করছি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, গত শনিবার রাতে দুর্ঘটনার পর থেকে পাঁচ দিনে মোট ৪৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে পরিচয় শনাক্ত হয়েছে ২৭জনের। বাকিদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নয়জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। এখন পর্যন্ত আহত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২জন সদস্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং দুজন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। নিখোঁজ আছেন তিনজন সদস্য। এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে স্টেশনে ফিরেছেন চারজন সদস্য।

নুরুল আলম বলেন, এ দুর্ঘটনায় পুলিশের ১০ জন এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এই দুই বাহিনীর সদস্যদের বাইরে আরও ২৩০জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে এর আগে বুধবার রাতেই বিএম কন্টেনারের কাজ শেষে ফিরে যায় সেনাবাহিনীও। ফলে বর্তমানে সেখানে অগ্নিনির্বাপক কাজে কোনো সংস্থা কাজ করছে না। তবে সেখানে এখনো সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ, পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিকসহ পুলিশ ফোর্স ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ কন্টেনারগুলো সরিয়ে ভালো এবং পুড়ে যাওয়া কন্টেনার পৃথক করার কার্যক্রম চালাচ্ছে। গতকাল বেলা তিনটা নাগাদ ডিপো পরিদর্শন করে কন্টেনার সরানো নিয়ে তাদের পরিকল্পনা করতে দেখা গেছে। এই সময় বিএম ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার মেজর অব. শামসুল হায়দার সিদ্দিকী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি। তবে অতি দ্রুত আমরা সহায়তার ব্যাপারটি সুরাহা করতে চাই। আমরা আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবো। ইতোমধ্যে আমরা ক্ষতিপূরণ প্রদানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তিনি বলেন, কন্টেনার সরানো হচ্ছে। আমাদের আশংকা কন্টেনার সরালে আরো দুয়েকটি লাশ পাওয়া যেতে পারে। আমরা কোনো কিছু গোপন করছি না, করবো না। আমরা আমাদের কর্মীসহ এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের পাশে থাকবো। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আমাদের পরিবার। যে শিশু পিতৃহীন হয়েছে, যে সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার পাশে থাকবো।

এদিকে বিএম কন্টেনার ডিপোর বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটি গতকাল বেলা ৪ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমের নেতৃত্বে অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে বিএম কন্টেনার ডিপোর কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা আগুনের সূত্রপাত থেকে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। ঘটনার সময় ডিপোতে কেমিক্যাল কন্টেনার এবং গার্মেন্টসসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কন্টেনারের তালিকা, রপ্তানিকারকদের বিস্তারিত তথ্যও সংগ্রহ করেন। এই সময় সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুল করিম, সীতাকুণ্ডের ইউএনও মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন, শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ জসীম উদ্দিন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাকিব মুবাররাত, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন এবং বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেছেন, তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামতও সংগ্রহ করবেন। বিএম কন্টেনার ডিপোর কর্তৃপক্ষকে বেশ কিছু কাগজপত্র সরবরাহ করতে কমিটি নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত শেষে কমিটি পুরো বিষয়টির উপর বিস্তারিত রিপোর্ট উপস্থাপন করবে বলেও জানানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকই পুকুরে কংকাল উদ্ধারের দুদিন পর মিলল মাথার খুলি
পরবর্তী নিবন্ধআরএসআরএম এমডি গ্রেপ্তার, পরে জামিন