বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, ঢাকা রণক্ষেত্র

সমাবেশ পণ্ড পুলিশ সদস্য ও যুবদল নেতার মৃত্যু প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও হাসপাতালে হামলা অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে আগুন ম ঢাকায় নেমেছে বিজিবি

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

পুলিশবিএনপি দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা। পুলিশ হাসপাতালে হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুজন। একজন পুলিশের কনস্টেবল, আরেকজন যুবদল নেতা। পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সারা দেশে আজ সকালসন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি।

শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহনে। পুলিশ জানিয়েছে, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে দুর্বৃত্তরা আইসিইউ সুবিধাসংবলিত একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ চারটি গাড়ি ও ১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া ৯টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ভাঙচুর করে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায় এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মো. পারভেজ মণ্ডল নামের ওই পুলিশ কনস্টেবলের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। তিনি দৈনিক বাংলা মোড়ে দায়িত্বরত ছিলেন বলে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান। তিনি বলেন, সংঘর্ষে আহত হওয়ার পর ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।

ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, ওই পুলিশ কনস্টেবলের মাথায় কোপানো হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, মৃত অবস্থাতেই ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে। আমরা ইসিজি করার পর নিশ্চিত হয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেছি।

এদিকে নয়া পল্টনে সংঘর্ষ চলাকালে মুগদা এলাকার এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সংঘর্ষের মধ্যে ৪৩ বছর বয়সী শামীম মোল্লা আহত অবস্থায় পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে তার সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে।

যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অভিযোগ, মুগদা থানা যুবদলের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ইউনিটের সভাপতি শামীম নয়াপল্টনে পুলিশের হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক ডিআইজি রেজাউল হায়দার বলেন, যখন আমাদের হাসপাতালে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, তখন কয়েকজন ধরাধরি করে একজনকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। তার নাম শামীম মোল্লা। হাসপাতালে আনার অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি একজন ড্রাইভার বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া বলা যাবে না।

একই দিনে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সমাবেশের কর্মসূচি থাকায় গতকাল সকাল থেকেই ঢাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাকরাইলে দলটির কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ বাঁধে।

কয়েক ঘণ্টায় পাল্টে গেল নয়া পল্টন : বিএনপির মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের জমায়েতের মধ্যেই নয়া পল্টনের অদূরে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েক স্থানে। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া, পাল্টাধাওয়ায় কাকরাইলসহ পুরো এলাকা হয়ে পড়ে রণক্ষেত্রে। সমাবেশ পণ্ডের মধ্যেই হরতাল ডাকে বিএনপি। পরে কয়েক স্থানে বাসে দেওয়া হয় আগুন।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও হামলায় নিহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য ও যুবদলের এক নেতা। আহত হয়েছেন পুলিশ, বিএনপি নেতাকর্মীসহ সংবাদমাধ্যম কর্মীরা।

একই দিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উদ্বেগআলোচনার মধ্যে আগের রাতে ও সকালের ভাগে নয়া পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় নেতাকর্মীদের সরব যে অবস্থান ছিল, তা সংর্ঘষের পর পাল্টে যায়; রূপ নেয় রণক্ষেত্রে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাকরাইল থেকে বিজয়নগর, সেগুন বাগিচা, সিদ্ধেশ্বরী, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, দৈনিক বাংলা, কাকরাইল মোড়ের আশপাশ, জাজেজ কোয়ার্টারস, রাজমনি মোড, আইডিবি ভবন, অডিট ভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে, শান্তিনগর, ডিসি রমনা ট্রাফিক অফিসের সামনেসহ মতিঝিল, পুরানা পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।

সংঘর্ষের পর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। সংঘর্ষের এ দিনে রাজধানীর বেশ কয়েক জায়গায় বাসে, অ্যাম্বুলেন্সে ও মোটরসাইকেলে আগুনও দেয় দুর্বৃত্তরা।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক জানান, কাকরাইল মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর রাজধানীর শাহজাহানপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, কমলাপুরসহ অন্তত ১৫টি জায়গায় বাস ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। তাদের টিম পুলিশ প্রোটেকশন নিয়ে সেখানে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।

কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে একদল লোক কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এ সময় কাকরাইল মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বঙে ও আইডিইবি ভবনে রাখা একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের সামনে ৬৭টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাস দুটিতে আগুন দেওয়া হয়। রাজধানীর মালিবাগমৌচাক ফ্লাইওভারে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। কমলাপুরে বিআরটিসির একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজন নিহত হয়েছে। ওই পুলিশ সদস্য দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় দায়িত্বরত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাড়িসহ সরকারি স্থাপনায় হামলা করেছে। সরকারি স্থাপনায় হামলা ও গাড়িতে আগুনের ঘটনায় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাকরাইলে সংঘর্ষস্থলে গিয়ে তিনি জানান, শর্তসাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপির কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করার কথা থাকলেও হঠাৎ করে বেলা ১২টার পর থেকে দেখা গেল তারা প্রধান বিচারপতির বাড়ির ফটকে ও জাজেস কোয়ার্টারের সামনে আক্রমণ করেছে। আইডিবি ভবনের সামনে দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত : গতকালের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগের রাত থেকেই নয়া পল্টন এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে দলে তারা আসছিলেন। দুপুরের দিকে পায়ে হাঁটা মানুষের স্রোত যাচ্ছিল নয়া পল্টনের দিকে। এর মধ্যে দুপুর ১টার দিকে গাজীপুর থেকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে আসা দুটি বাস কাকরাইল মসজিদ মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। নেতাকর্মীদের নেমে বাকি পথ হেঁটে সমাবেশে যেতে বলেন পুলিশ সদস্যরা। তবে নেতাকর্মীরা বাস নিয়ে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের সমাবেশে যোগ দিতে চায়। এ নিয়ে বাদানুবাদ চলছিল।

এ সময় সেদিক দিয়ে নয়াপল্টনের সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা বাস দুটির দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। লাঠিসোঁটা নিয়ে বাস দুটিতে হামলাও করে। এতে কিছুটা অপ্রস্তুত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যে যেদিকে পারে দৌড় দেয়। কয়েকজন ঢুকে পড়েন বিচারকদের আবাসিক এলাকায়। তাদের ধাওয়া করে সেখানে যায় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এক পর্যায়ে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পেয়ে নয়া পল্টন থেকে আরও কয়েকশ নেতাকর্মী এসে সংঘর্ষে যোগ দেয়। এ সময় সংঘাতে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীরা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে আগুন দেয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় কাকরাইল মসজিদ মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ বঙটি। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের গার্ড রুমের কাচও ভাঙচুর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাকরাইল মসজিদ মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে সার্কিট হাউজ রোড জুড়ে। ঘণ্টাখানেক সংঘর্ষের পর পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। এ সময় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যও আহত হন।

বেলা সোয়া ২টার দিকে সেখানে সাত গাড়ি বিজিবি আসে। একটু পরেই মিন্টু রোড থেকে দল বেঁধে হেঁটে নয়া পল্টনের দিকে যেতে দেখা যায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের শতাধিক সদস্যকে। ততক্ষণে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে নয়া পল্টন এলাকায়। ওদিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ আসছিল। বেলা পৌনে ৩টার দিকেই বিএনপির সমাবেশ থেকে নেতারা সরে যান, পণ্ড হয়ে যায় সমাবেশ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে কাকরাইল, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, সেগুন বাগিচা, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর এলাকায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় জানান, সংঘর্ষের মধ্যে আহত প্রায় অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে বিএনপির সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুর নবী খান সোহেলের বক্তব্য দেওয়ার সময় কাকরাইল মোড়ের কাছে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার সেল নিক্ষেপের শব্দ শোনা যাচ্ছিল সভা মঞ্চ থেকে। এতে বিএনপি মঞ্চের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে যান, স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময় পুলিশের একটি দল সাঁজোয়া যানসহ এগিয়ে আসতে থাকে নয়া পল্টনের দিকে। সেখানে টিয়ার শেল ছোড়া হয়। খসরুর বক্তব্যের পরপরই সভা মঞ্চের মাইক বন্ধ হয়ে যায় এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা বসে পড়েন। ১০ মিনিটের ব্যবধানে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের তোপের মুখে পুরো এলাকা নেতাকর্মী শূন্য হয়ে পড়ে। বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নেমে যান মঞ্চ থেকে। তখনই সকালসন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপি নেতারা মঞ্চ ত্যাগ করার পর সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায় এবং কাকরাইলের মোড় ও নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। বিকাল ৪টার দিকে নয়া পল্টনের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি কর্মীরা। কাঁদুনে গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের আগুন জ্বালাতে দেখা যায়।

আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীরাও : বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে ঢাকার কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ডজন খানেক সংবাদকর্মী। আহতদের কালবেলার প্রতিবেদক রাফসান জনির সঙ্গে থাকা কালবেলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজন ভট্টাচার্য জানান, নাইটিঙ্গেল মোড়ে সংঘর্ষ চলাকালে রাফসান সেখানে ভিডিও ধারণ করছিলেন। বিএনপির সমাবেশে আসা একদল লোক তার উপর হামলে পড়ে। তাকে লাঠি ও গাছের ডাল দিয়ে পেটানো হয়। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তাকে ধাওয়া করে পেটানো হয়। হামলাকারীরা রাফসানের মোবাইল ফোন ও আইডিকার্ড ছিনিয়ে নিয়েছে। এদিকে বিএনপি কর্মীদের হামলায় গণমাধ্যমকর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে।

ঢাকায় নেমেছে ১১ প্লাটুন বিজিবি : বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যা এবং হরতালের ঘোষণার পর রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর প্রায় ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে এ বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন বিজিবি সদস্য থাকেন। শরিফুল বলেন, রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য।

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে মাঠে র‌্যাব : সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ, বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানেল যুগে বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই