২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। খবর পেয়ে আমরা পাহাড়ে উঠি। যেখানে জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। আমাদের সাথে তাদের ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক সময় আমরা পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হই। পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করি। একে ২২, একে ৪৭সহ নানা রকম অস্ত্র, গুলিসহ সরঞ্জাম উদ্ধার করি। খুবই চ্যালেঞ্জের কাজ ছিল। তারা তো জঙ্গি। তাদের কাজ হচ্ছে দেশকে হুমকিতে ফেলা। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ উতরাতে সক্ষম হই। বাঁশখালীর লটমণি পাহাড়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযান বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন তৎকালীন র্যাব–৭ এর সহকারী পরিচালক এমজি রব্বানী। গতকাল চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিম তার সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। ঘটনা পরবর্তী বাঁশখালী থানায় দায়ের করা মামলার বাদী ছিলেন এমজি রব্বানী। ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট মামলায় চার্জগঠন হলেও নানা কারণে এতোদিন (চার বছর পার) সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যায়নি। সাক্ষী হাজির না হওয়া, চার্জগঠনের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের উচ্চ আদালতে আবেদন ছিল এর মধ্যে অন্যতম। সাক্ষ্যে এমজি রব্বানী বলেন, মাটির দেড় ফুট নিচ থেকে সেদিন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও অস্ত্রের সরঞ্জাম উদ্ধার করি আমরা। আমাদের বিশাল বহর ছিল। চারটি গাড়ি করে মোট ৩১ জন ছিলাম। জঙ্গি আস্তানাটি ছিল শহীদ হামজা ব্রিগেড নামের জঙ্গি সংগঠনের। বর্তমানে সংগঠনটি নিষিদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সাক্ষ্য শেষ হলে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা এমজি রব্বানীকে জেরা করেন। ট্রাইব্যুনালের কৌঁসূলি রুবেল পাল আজাদীকে বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আসামিদের মধ্যে ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন। এরমধ্যে ১০ জনকে কারাগার থেকে হাজির করা হয়। বাকী ছয়জন জামিনে রয়েছেন। বিএনপি নেত্রী শাকিলা ফারজানাসহ চারজন পলাতক আছেন। এমজি রব্বানীর সাক্ষ্য শেষে এ চারজনের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ১৯ নভেম্বর মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ রাখা হয়েছে। সেদিন মামলার দুই ও তিন নম্বর আসামির সাক্ষ্য নেয়া হবে। ইতিমধ্যে এ দুজন সাক্ষীর প্রতি প্রসেস ইস্যু করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর মাদ্রাসাতুল আবু বকর (র.) –এ অভিযান চালিয়ে হামজা ব্রিগেডের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ঘটনায় র্যাব–৭ এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় একটি মামলা করেন। এর দুইদিন পর ২২ ফেব্রুয়ারি বাশঁখালীর লটমণি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে হামজা ব্রিগেডের আরো ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় নানা অস্ত্র–শস্ত্র। এ ঘটনায় র্যাব–৭ এর আরেক সহকারী পরিচালক এম জি রব্বানী বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা করেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে এ দুই মামলার তদন্ত শেষ করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ মার্চ বাঁশখালী ও ৩ এপ্রিল হাটহাজারী থানার মামলায় মোট ৬১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এর মধ্যে হাটহাজারী থানার মামলায় আসামি করা হয় ৩৩ জনকে এবং বাঁশখালী থানার মামলায় আসামি করা হয় ২৮ জনকে। দুই মামলাতেই বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে আসামি করা হয়। হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডি থেকে শাকিলা ফারজানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের কৌঁসূলি রুবেল পাল বলেন, বাঁশখালী থানার মামলায় অবশেষে সাক্ষ্য শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে মামলাটিকে রায়ের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। হাটহাজারী থানার মামলার বিষয়েও আমাদের একই লক্ষ্য। আগামী ১৯ নভেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণেরও তারিখ রয়েছে। সেদিন মামলাটির বাদী ও তৎকালীন র্যাব–৭ এর সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সাক্ষ্য দিবেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে প্রসেস ইস্যু করা হয়েছে। আশা করছি, দুটি মামলা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বিএনপির সাবেক হুইপ প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে। বর্তমানে তিনি বিদেশে রয়েছেন।