ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। কেন্দ্রীয় ভাবে চট্টগ্রামের জন্য গঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের একজন সদস্যও তিনি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি প্রায় সময় চট্টগ্রাম আসলেও এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম আসনে। এসময় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীকে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি আসন্ন চসিক নির্বাচন নিয়ে তাঁর দলের সার্বিক অবস্থান তুলে ধরেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো-
আজাদী : আপনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আপনাদের দলের ভাবনা কী?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : চট্টগ্রামের যে গুরুত্ব তা ঢাকার চেয়েও কোনো অংশে কম নয়। নানা কারণে বিশ্বে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেক বেশি। দেশ ভাগের পর থেকে ঐতিহাসিকভাবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে এই শহর একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছে। এখানকার রাজনীতি সারাদেশকে প্রভাবিত করে। আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে যে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন তাতে চট্টগ্রামকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজেছে সরকার। এই চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক আঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। ইকোনোমিক জোন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু টানেল করা হচ্ছে। যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন করা হচ্ছে। এলিভেটেটড এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। এই গুরুত্বপূর্ণ সিটির নির্বাচনও আমাদের কাছে অনেক গুরুত্ব বহন করে। এই নির্বাচনে আমাদের দল থেকে ক্লিন ইমেজের একজন পরীক্ষিত নেতা রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে একটি সুযোগ এসেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার।
আজাদী : আপনি ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে কেমন নির্বাচন চান?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকভাবে দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশেষ করে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত প্রতিটি পৌরসভার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও বিএনপি বরাবারে মতোই ঢালাও ভাবে অভিযোগ করে যাচ্ছে। এখন মিডিয়া যেভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে-তাতে কোথাও গন্ডগোলের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এই পৌরসভা গুলোতে বিএনপির প্রার্থীও জয়ী হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও উৎসব মুখর পরিবেশে সুষ্ঠু হবে। এটা আমার বিশ্বাস।
আজাদী : বিএনপির মেয়র প্রার্থীর দাবি- আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন যেন নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে কিনা?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : চট্টগ্রামে ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে যাকে (রিটানির্ং কর্মকর্তা) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনি নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র কর্মকর্তা। নির্বাচন তিনি পরিচালনা করছেন। সমস্ত প্রশাসন তার অধীনে নির্বাচনকালীন সময়ে কাজ করছে। বিএনপি তাদের পুরনো অভ্যাসবশত সব কিছুতেই ঢালাও ভাবে অভিযোগ করে এবং সন্দেহ করে। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। তারা নির্বাচনে জিতলে ভালো, না জিতলে বলে- দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই, গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। বিএনপি মূলত নির্বাচনে আসে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রেক্ষাপট দিয়ে জাতীয় সরকার পরিবর্তন হবে না। এটি স্থানীয় পর্যায়ে বড় নির্বাচন। চট্টগ্রামের এতো বড়ো বড়ো মেগা প্রকল্পের কাজ হচ্ছে তাতে চট্টগ্রামের মানুষ আওয়ামী লীগের উপর যথেষ্ট আস্থাশীল। এই প্রেক্ষপটে আমি মনে করি আগামী ২৭ জানুয়ারি একটি বড় ধরনের ভোট বিপ্লব হবে। এই ভোট বিপ্লবে আমাদের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। এই দেশে জনগণের রায় মাথা পেতে নেয়ার একমাত্র উদাহরণ আওয়ামী লীগের আছে। একমাত্র সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ইতিহাসও আওয়ামী লীগের আছে।
আজাদী : বিএনপির মেয়র প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন, চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচন পরিচালনার প্রধান সমন্বয়ক করেছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপিকে। এমপি হিসেবে তিনি নির্বাচনী বিষয় নিয়ে কথা বলা নির্বাচনী আইনের লক্সঘন বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার আইনে মন্ত্রী-এমপিরা গণসংযোগে যেতে পারেন না। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কোনো গণসংযোগে যাননি। তিনি শুধুমাত্র এমপি নন; তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও। উনার একটি রাজনৈতিক দায়িত্ব আছে। উনাকে নির্বাচন সমন্বয় করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ঘরে বসে দলীয় নেতাদের সাথে কতা বলছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন, এতে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের কোনো কারণ নেই। বিএনপির আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও তো বিএনপি শীর্ষ নেতা। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রামের সকল এমপি নির্বাচনী আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি। বিএনপি যেই কথাগুলো বলে-যে ধরনের প্রপাগান্ডা চালায় সেটা তাদের চিরাচরিত রাজনীতির অংশ ছাড়া আর কিছু নয়।
আজাদী : দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বারবার বলার পরও বিদ্রোহীরা অনড় অবস্থানে, এই ব্যাপারে দলের একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে আপনার বক্তব্য কী?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : স্থানীয় সরকারের যে আইন আছে তাতে দলীয় প্রতীক দেয়া হয় মেয়র পদে। স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মেয়র পদে রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। একই মনোনয়ন বোর্ড কাউন্সিলর পদেও ৫৫ জনকে দল থেকে সমর্থন দিয়েছেন। গণভবনে সকল কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তখন সকলেই প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মনোনয়ন যিনি পাবেন তার পক্ষে সকলেই কাজ করবেন। চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যদের সুপারিশ এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সার্ভে রিপোর্ট বিবেচনা করে কাউন্সিলর পদে সমর্থন দেয়া হয়েছে। এখানে যারা মনোনয়ন নিয়েছিলেন তারা আমাদের নেত্রীর কাছে (শেখ হাসিনা) অঙ্গীকারনামা দিয়েছিলেন যে তারা মনোনয়ন না পেলেও যে পাবেন তার পক্ষে কাজ করবেন। এখন যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করছেন তাতে ব্যাপারে আমি চট্টগ্রামের সন্তান হিসেবে বলবো- দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। যারা আজকে মূল্যায়ন হননি বা মনোনয়ন পাননি ভবিষ্যতে আপনাদের মূল্যায়ন করা হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা সবাইকে মূল্যয়ন করেন। দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে দলের ভবিষ্যত কর্মকাণ্ডে মূল্যায়ন করা হবে। আমরা দলের বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতাদের হারাতে চাই না।
চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আপনাদের প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : জনগণের স্বত:র্স্ফূত ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে আমাদের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জয়লাভ করবেন। চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ভালোবাসা- চট্টগ্রামের মানুষ সেই ভালোবাসার মূল্যায়ন করবেন। আমাদের মেয়র প্রার্থী সর্বজন গ্রহণযোগ্য। তিনি একজন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী। তিনি জয়লাভ করবেনই।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই চট্টগ্রাম একটি বিশেষ আবেগের স্থান। করোনাকলীন সময়ে সবকিছু যখন স্থবির ছিল তখন প্রধানমন্ত্রী হাটহাজারী থেকে বিশেষ জাতের যে লাল মরিচ সেই মরিচ সংগ্রহ করেছেন এবং পরবর্তীতে এই মরিচের চারাগাছ গণভবনের ভেতরে যে ক্ষুদ্র কৃষি জমি আছে তাতে রোপন করেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে এমন দরদ দিয়ে ভালোবাসেন। চট্টগ্রামের সব কিছু প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে রয়েছে। সুতরাং চট্টগ্রামবাসী প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসার মর্যাদা দেবেন- আমি তা বিশ্বাস করি।