বিএনপি দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে বেড়াচ্ছে : তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

 

 

মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিএনপি মধ্যপ্রাচ্যে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মধ্যে পৃথিবী যখন স্তব্ধ, ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষ যখন শঙ্কিত ও প্রচণ্ডভাবে উদ্বিগ্ন সে সময়ে তারা জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশেবিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে বেড়াচ্ছে। সেটার বহি:প্রকাশ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৈঠক। যা প্রচণ্ড নিন্দনীয়।

গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, নির্বাচনকে সমনে রেখে মধ্যপ্রাচ্য পাকিস্তনি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বৈঠক করছে বিএনপি। গণমাধ্যমে আসা সংবাদটি আওয়ামী লীগ কিভাবে দেখছে? ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. হাছান মাহমুদ। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ আরো বলেন, বিএনপির রাজনীতির ষড়যন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। তারা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে ষড়যন্ত্রের পথই বেছে নিয়েছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তাদের যে দহরমমহরম বা সংশ্লিষ্টতা সেটা বহু পুরনো।

হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিএনপিকে ৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন। সুতরাং তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, তাদের এ ষড়যন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচন আরো অনেক দেরি আছে। নির্বাচনের বাকি আরো সাড়ে তিন বছর রয়েছে।

ষড়যন্ত্র’র পথ পরিহারে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো, তারা যেন ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে। তারা অতীতে ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বন করে এগুতে পারেনি সেটা নিশ্চই তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে। না হয় আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের মানুষ পরপর তিনবার রায় দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাতো না। ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপেস্টম্বর) ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কদের বলেছিলেন, ‘বিএনপি এবং সামপ্রদায়িক অপশক্তি একটি বিদেশি সংস্থা গোপনে বৈঠক করে বাংলাদেশে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে। তারা বিদেশে বসে সরকার পতনের জন্য ষড়যন্ত্র করে, আবার দেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা বলে।’

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গ :

এর আগে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আমাদের দল আওয়ামী লীগ মনে করে, সমালোচনা পথ চলাকে শাণিত করে। সমালোচনা কাজকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। সেজন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের বিকাশের নীতি নিয়ে আমাদের সরকার কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাংলাদেশে দৈনিক সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ শ। এখন বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্র সাড়ে ১২ শ। তখন অনলাইন পত্রিকা ছিল হাতে গোণা কয়েকটি। এখন কয়েক হাজার অনলাইন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন প্রাইভেট টেলিভিশন ছিল দশটা। এখন ৩০ টি প্রাইভেট টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে, ৪৫টি প্রাইভেট টেলিভিশনের জন্য লাইসেন্স দেয়া আছে। এর বাইরে চারটি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চালু আছে। সংবাদ মাধ্যমের এই যে ‘এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ’ সেটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে অনেক উন্নত দেশেও কিন্তু সংবাদপত্রের এমন স্বাধীনতা নাই মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউকে’তে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা ছিল ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। সেটি একসময় পৃথিবীর বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ছিল। সেই পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে। মামলা হয়েছিল এবং মামলার পর তাদের ওপর বিরাট জরিমানা করেছে আদালত, সেই জরিমানা দিতে না পেরে কোম্পানি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসি’র পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ইউকে এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপে (যুক্তরাজ্য বাদ দিয়ে) হরহামেশা ভুল এবং অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে পত্রিকা এবং গণমাধ্যমকে জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে সেটি কখনো হয়নি। কোন সংবাদপত্র এ সমস্ত কারণে বন্ধ হয়নি। সেজন্য বলছি অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।

সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরে মাত্র কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সবগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত। থাইল্যান্ডে সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেলের ফিড সরকার নিয়ন্ত্রিত। সেখানে যদি সরকারের অপছন্দনীয় কোন কন্টেন্ট থাকে সেটা বাদ দেয়া হয়। আমাদের দেশে তা হয় না। কারণ আমরা মনে করি, স্বাধীন মতপ্রকাশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সেটি বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে। তিনি বলেন, আমরা বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করি। একটি ন্যায়ভিত্তিক, বির্তক ভিত্তিক এবং সমালোচনা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া গণতন্ত্র যেমন বিকশিত হয় না। একইভাবে সমাজের উন্নতি সাধন হয় না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসি হিলে বসার জায়গা পরিষ্কারের নির্দেশ সুজনের
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন আজ