নয়া পল্টন থেকে সরতে রাজি হয়েছে বিএনপি, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য এখন কমলাপুর স্টেডিয়াম চাইছে দলটি। পুলিশ তাদের মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশটি করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিএনপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেই মাঠটিও দেখে আসবে। বহুল আলোচিত এই সমাবেশের আগের দিন আজ শুক্রবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে পুলিশ ও বিএনপি উভয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। গত কয়েকদিনের উত্তাপ-সংঘাতের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের বৈঠকে সমাবেশের নতুন স্থান দুটি আলোচনায় আসে। খবর বিডিনিউজের।
দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবেন তারা। কোথায়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনায় অনেক স্থানের নাম পুলিশের ও তাদের পক্ষ থেকে উঠেছে। আমরা বলেছি পল্টন, উনারা বলেছেন- না। উনারা বললেন সোহরাওয়ার্দী, পরে বলেছে- না সোহরাওয়ার্দী না। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা আরামবাগ বলেছি, উনারা তাতে রাজি হয়নি। আমরা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট স্কুলের কথা বলেছি, তারা সেটাতেও রাজি হয়নি। পরে আমরা বলেছি কমলাপুর স্টেডিয়াম, উনারা নীতিগতভাবে সেটা দেখছেন।
উনারা আরেকটা প্রস্তাব দিয়েছেন সেটা হল মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ। আমরা নিজেরা এখন যাব। দুটি মাঠ পরিদর্শন করে স্টেডিয়াম এবং বাঙলা কলেজ যেটা পছন্দ হয়, আমরা সেটা ওনাদের জানাব। যে স্থানই নির্ধারিত হোক, সেখানে জনসভার প্রস্তুতি বিএনপির আছে বলে জানান বুলু। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়া পল্টন দুটোর কোথাও যে সমাবেশ হচ্ছে না, তা স্পষ্ট হয় এই বিএনপি নেতার কথায়। তিনি বলেন, নয়া পল্টনে পুলিশ সমাবেশ করতে দেবে না, আর বিএনপিও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে না।
বিএনপি এতদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না যাওয়ার পাশাপাশি নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে অনড় ছিল। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বিকালেও এক সংবাদ সম্মেলনে নয়া পল্টনের কথাই বলেছিলেন। সেই অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বুলু বলেন, পলিটিক্যাল স্টান্ড অনেক কিছুই থাকে। আমরা সর্বশেষ কমলাপুর বলেছি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুণ অর রশীদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, একটি সমঝোতায় এসেছে। আমরা মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠের কথা বলেছি, আর উনারা (বিএনপি) কমলাপুর স্টেডিয়াম।
শুক্রবার সকালে পুলিশ দুটি মাঠ পরিদর্শন করবে এবং সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বুলুর নেতৃত্বে বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জে মোহাম্মদ আলী, আহমেদ আজম খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল।
বুলু জানান, বুধবার কার্যালয় থেকে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বুধবার দুজনের জামিন হয়েছে। তারা বলেছে, রোববার কোর্টে দাঁড়ালে সব নেতাদের জামিন হয়ে যাবে। তারা কোনো রিমান্ড চাইবে না বা প্রসিকিউটর কোনো প্রতিবাদ করবে না। নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয় এখন খুলে দেওয়ার আশ্বাসও ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের মিছিল, পাহারা: ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের আগে আর নয়া পল্টনে সংঘর্ষের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও গলির সড়কে দলবেঁধে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা, কোথাও কোথাও মিছিলও করেছে তারা। সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির যে কোনো ধরনের ‘নাশকতা ঠেকাতে’ এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ঢাকার বাইরেও নেতকর্মীরা সতর্ক রয়েছে বলে জানান তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের এক সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনার পর সোচ্চার হয়েছেন নেতাকর্মীরা।
ঢাকার সড়কে কমেছে গাড়ি, যাত্রীও কম : ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের আগে বুধবারের সংঘাতের পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ঢাকার সড়কে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাসও কম ছেড়ে যাচ্ছে। বুধবার বিকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাসের সংখ্যা কম দেখা যায়। তখন বাস পেতে যাত্রীদের বেশ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল সন্ধ্যার পর মানুষের সংখ্যাও কমে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন যেসব স্থানে বাসের অপেক্ষায় মানুষের ভিড় দেখা যায়, সেসব স্থানে মানুষও কম দেখা গেছে। এদিকে পরিবহন মালিকরা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশের দিনও ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোয় বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়ানোর মধ্যে বুধবার সংঘাত বাঁধে নয়া পল্টনে। সেখানে দলীয় কার্যালয়ে থাকা বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। এই সংঘাতের পর শনিবারের সমাবেশ ঘিরে শঙ্কার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে যানবাহন চলাচল কম দেখা যায়।