বিএনপির ২৭ দফা কেন, জানালেন খসরু

| সোমবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:২৮ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ হিসেবে বিএনপির ২৭ দফা কর্মপরিকল্পনা দলটির চলমান আন্দোলনেরই অংশ বলে জানিয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, এটা বিএনপির দেশ পরিচালনার স্বার্থে, নিজের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে এই ২৭ দফা পূরণ করতে হবে। এখানে কোনো অপশন নাই। কারণ এই ২৭ দফা না করে আপনি রাষ্ট্র চালাতে পারবেন না।

বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই বিএনপির এগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। টানা দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন না করার নিয়ম চালুসহ বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলে ফেলতে গত ১৯ ডিসেম্বর এই ২৭ দফা কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বিএনপি, যেটিকে দলটি ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ বলছে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, উচ্চ কক্ষের আইনসভা চালুসহ সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনপ্রবর্তন এবং এক বছর বেকার ভাতা দেওয়ার কথা বলেছে দলটি। খবর বিডিনিউজের।

রোববার এ ২৭ দফার ব্যাখ্যায় আমীর খসরু বলেন, অনেকে বলছেনরাস্তায় আন্দোলন করছি, আবার ২৭ দফা এনে এ সেমিনার কেন করতে হচ্ছে। আমরা কেন প্রত্যেক জেলায় গিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছি। আমি আবারো বলছিআমরা মানুষ যারা এখনও অনেকে একটা ধারণা নিচ্ছি যে ফ্যাসিস্ট যাবে, দুর্নীতিবাজদখলদার যাবেসব ঠিক আছে। আমরা এরপরে কী লাভবান হব কি না।

এজন্য ২৭ দফা আন্দোলনের অংশ। যারা এখনও অপেক্ষা করছে যে, আমরা আন্দোলনে যাব কি যাব না, আন্দোলনে অংশ নেব কি নেব না, এখানে ভবিষ্যতে সত্যিকার অর্থে কোনো দিকনির্দেশনা আছে কি না, আসলে কী হবে? এ জিনিসটা বুঝাতে হবে। তিনি বলেন, তারেক রহমান সাহেবের ২৭ দফার পেছনে যে ভাবনাটা, যে দর্শনটা, সেটা আমাদেরকে আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে, তাদের মনোজগতে পৌঁছাতে হবে। বাংলাদেশের মানুষকে বোঝাতে হবে, এই ২৭ দফার মাধ্যমে আগামী দিনের বাংলাদেশ কী রকম দেখাবে?

বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা বলছি, বাংলাদেশ যে গভীর গর্তের মধ্যে ডুবে আছে, পড়ে আছে সেখান থেকে বের করে এনে, সেখানে থেকে ট্র্যাকে আনার জন্য ২৭ দফা। ওই গর্ত থেকে এনে আপনি যদি ট্র্যাকে বসাতে পারেন, তারপর আপনি দেশ পরিচালনা করতে পারবেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ঢাকা মহানগর উত্তর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও বিএনপির মিডিয়া সেলের যৌথ আয়োজনে ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আমীর খসরু।

২৭ দফার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা অনেক বড় বিষয়। এখানে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য সেবায় ১ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে এবং শিক্ষায় ১ শতাংশের নিচে। তার উপরে রয়েছে দুর্নীতি। তার অভিযোগ, বিশ্বের যে মানদণ্ড, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য খাতে যে খরচটা করে তা আফগানিস্তানেরও নিচে। তাহলে বুঝতে পারছেন বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে জনসাধারণের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও ‘প্রিভেন্টিভ হেলথ কেয়ারের’ বিষয়ে কী করবে তার রূপরেখা গ্রামউপজেলা পর্যায়ে জনগণের কাছে তুলে ধরতে ড্যাবের চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন তিনি। মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখন কী হচ্ছে? এখন আমাদের দেশের অধিকার হচ্ছে মেগা প্রজেক্ট করব আর চুরি করব, মেগা প্রজেক্ট করব আর বিদেশে টাকা পাচার করব, মেগা প্রজেক্ট করব আর পাঁচটা গাড়ি চালাব। একেকটা গাড়ির দাম দুই কোটি, তিন কোটি, চার কোটি টাকা। আমরা মেগা প্রজেক্ট করব নিজের দলের লোকজনের পকেট ভর্তি করার জন্য।

আলোচনা সভায় ২৭ দফার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবী উল্লাহ নবী, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ঢাকা উত্তর ড্যাবের সভাপতি সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গনি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. বজলুল গনি ভুঁইয়া বক্তব্য দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণতন্ত্র ‘এভাবে’ বাঁচে না, উপলব্ধি কাদেরের
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬