বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের সর্বশেষ কর্মসূচি চট্টগ্রাম বিভাগে তারুণ্যের রোডমার্চ গতকাল সকাল ৯টায় কুমিল্লা থেকে শুরু হয়। ১৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রাত ৯টা ২৪ মিনিটে চট্টগ্রামে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে। এর আগে সরেজমিনে দেখা যায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের রোডমার্চের গাড়িবহর চট্টগ্রাম সিটির প্রবেশদ্বার ‘সিটি গেইট’ দিয়ে প্রবেশ করে।
এরপর সড়কের দুইপাশে শত শত নেতাকর্মীদের ভিড় অতিক্রম করতে করতে কেন্দ্রীয় এই শীর্ষ নেতাদের রোডমার্চের গাড়ি বহর লাভ লেইনস্থ নূর আহম্মদ সড়কের মোড়ে সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছে রাত ৮টা ৫৪ মিনিটে। ৮টা ৫৫ মিনিটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখতে মঞ্চে উঠেন। রাত ৯টা ১০ মিনিটে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য শুরু করেন এবং ৯টা ২৪ মিনিটে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন : দিনভর বিএনপির তারুণ্যের রোডমার্চের সমাবেশস্থল চট্টগ্রামের লাভলেইন মোড়ে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিলে–শ্লোগানে জড়ো হয়েছেন দুপুরের পর থেকে। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির রোডমার্চকে ঘিরে বিএনপির বৃহত্তর চট্টগ্রামের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপক শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো ধরনের নির্বাচনে আসবে না বলে ঘোষণা দিলেও গতকালের বিএনপির রোডমার্চের আড়ালে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী শোডাউন করেছেন।
পুরো সমাবেশের আশপাশের এলাকা জুড়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. শাহাদাত হোসেন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ব্যারিস্টার মীর হেলালসহ অসংখ্য নেতার ব্যানার ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশ জুড়ে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অনেক বিএনপি নেতা সংসদীয় আসন উল্লেখ করে ডিজিটাল ব্যানার লাগানোর দৃশ্য গুলো।
এছাড়াও ট্রাকে–পিকআপে এসব নেতাদের ব্যান্ডপার্টি এবং সাউন্ডবঙে শোডাউন সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। পুরো নূর আহম্মদ রোডসহ লাভ লেইন মোড়, কাজীর দেউড়ি, স্টেডিয়াম এলাকা, ওয়াসা মোড়, সিটি গেইট, কর্ণেলহাট একেখান গেইট ছেয়ে ফেলেছে ব্যানারে–ফেস্টুনে। এছাড়াও ছোট মিনি ট্রাক, পিকআপে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সম্ভাব্য বিএনপির প্রার্থীদের ছবিসহ ডিজিটাল ব্যানার লাগিয়ে নেতাকর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। অনেকেই চালিয়েছেন নির্বাচনী শোডাউনও। বিশেষ করে কঙবাজার–১ সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ (বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত), আনোয়ার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, বাঁশখালী থেকে প্রয়াত সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছবিসহ তার ছেলে, বাঁশখালী থেকে লেয়াকত আলী, সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, খাগড়াছড়ি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া, হাটহাজারী থেকে সাবেক সংসদ সদস মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল, একই আসন থেকে সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, পটিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল এবং আসনের দক্ষিণ জেলা বিএনপির এনামুল হক এনাম, লোহাগাড়া থেকে নাজমুল মোস্তাফা আমিন, যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরীর কর্মী–সমর্থকরা ব্যাপক শোডাউন করেছেন।
রোডমার্চকে ঘিরে নগর জুড়ে ছিল উদ্বেগ–উৎকন্ঠা : বিএনপির কুমিল্লা থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম অভিমুখে দীর্ঘ রোডমার্চকে ঘিরে আগে থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের নানান বক্তব্যে সাধারণ মানুষের মাঝে ছিল সকল থেকেই উদ্বেগ–উৎকন্ঠা। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে উৎকন্ঠা বিরাজ করছিল। নগরীর অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অভিভাবকরা গতকাল স্কুলে যেতে দেননি। আর যারা চাকরিজীবী এবং শ্রমজীবী মানুষ তারাও আতংকের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব উদ্বেগ–উৎকন্ঠাকে ছাপিয়ে রাত প্রায় সাড়ে ৯টায় কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে আসা ১৫০ কিলোমিটারের রোডমার্চ শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে।
দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি থামাতে পারেনি রোডমার্চে অংশ নেয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের আনন্দ–উচ্ছ্বাস : চট্টগ্রামে গতকাল সকাল থেকেই ছিল দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। বিকাল ৩টায় রোডমার্চের সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলার প্রতিটি উপজেলা–ইউনিয়ন থেকে এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, কঙবাজার থেকে অসংখ্য বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপর ১টার পর থেকেই আসতে শুরু করে।
থেমে থেমে বৃষ্টির মাঝেও ব্যান্ডপার্টি এবং গানের তালে তালে মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকে। অনেকেই সন্ধ্যার আগে চলে গেছেন, অনেকেই রাত সাড়ে ৯টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও থামাতে পারেনি রোডমার্চে অংশ নেয়া বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের আনন্দ–উচ্ছ্বাস। তারা দিনভর মিছিল করেছেন–স্লোগান দিয়েছেন।
ব্যান্ডপার্টি আর গানে গানে সব আনন্দ এসে থেমেছে লাভ লেইন সমাবেশ স্থলে: চট্টগ্রামে রোডমার্চের সমাবেশে মহানগরীসহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলার প্রতিটি উপজেলা–ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, কঙবাজার থেকে শত শত নেতাকর্মী এসেছেন ব্যান্ডপার্টি এবং পিকআপে সাউন্ড বঙে গানের তালে তালে নেচে–গেয়ে। বিভিন্ন জেলা–উপজেলা এবং নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে ব্যান্ডপার্টিসহ সাউন্ড বঙে গান ছেড়ে দিয়ে সমাবেশস্থলে এসেছেন। নেতাকর্মীদের সব আনন্দ এসে থেমেছে লাভ লেইনস্থ সমাবেশস্থলে। পুরো সমাবেশস্থলসহ আশপাশের এলাকা জুড়ে ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ।