বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’র ব্যাখ্যা দিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যার যার সংস্কৃতি ঠিক রেখে সম্মিলিত জাতি গঠনই হলো তারেক রহমানের লক্ষ্য। তবে আমরা বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত। বিদেশিদের কাছ থেকে এই কনসেপ্টটির বিষয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার রাষ্ট্রটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখান থেকে উদ্ধারের জন্য বিএনপির ২৭ দফা। সত্যি কথা বলতে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, এই রূপরেখায় তারা কিছুই ভুল বের করতে পারেনি, যেটা নিয়ে বিরোধিতা করবে। তারেক রহমানের দেওয়া রূপরেখা নিয়ে আওয়ামী লীগ যে বিরোধিতা করবে, তার কিছুই এখানে দেওয়া হয়নি।
সবচেয়ে বড় কথা বিরোধিতা করার মতো কোনো ভাষা আওয়ামী লীগ খুঁজে পায়নি। আওয়ামী লীগ এটাকে বলছে, বিএনপির স্ট্যান্টবাজি। এই রূপরেখার ওপর তারা কোনো বক্তব্য রাখতেও সক্ষম হয়নি। এই রূপরেখা এমন একটি রূপরেখা, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দেশে–বিদেশে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের মনের প্রত্যাশার প্রতিফলন এই রূপরেখার মাধ্যমে ঘটেছে।
রূপরেখা বিষয়ে জনমত গঠন করার জন্য পেশাজীবীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, সমস্ত মহিলা পেশাজীবী, ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার পেশাজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। সব পেশাজীবী যদি এগিয়ে না আসে, তাহলে শুধু আলোচনা করে এই আন্দোলন বেশি দূর যাওয়া যাবে না। তারেক রহমান সাহেবের মেসেজ যদি পৌঁছাতে না পারি, তাহলে আন্দোলন সার্থক হবে না।
গতকাল বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো নেতার মুখে আপনারা শুনেছেন, কেউ দুবারের চেয়ে বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তারেক রহমান আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
খসরু বলেন, তারেক রহমানের রাষ্ট্রপরিকল্পনায় মেধাবীদের নিয়ে আসার পরিকল্পনা কেউ কী এর আগে বলেছেন। তার রাষ্ট্রপরিকল্পনায় উচ্চ কক্ষে স্থান পাবেন এসব মেধাবীরা। এইসব মেসেজ জনগণকে পৌঁছাতে হবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় জানাতে হলে জনগণের কাছে কথাগুলো পৌঁছাতে হবে। কারণ তারা এগিয়ে আসলে, সরকার পতন সহজ হবে। আওয়ামী লীগ নেতার মতো আমরা বলতে পারি না তোরা সব বাঙালি হয়ে যা।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র নেই, রাজ্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশ যে গভীর গর্তের মধ্যে পড়েছে, সেই গর্ত থেকে দেশকে উদ্ধার করে রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো ভেঙে ফেলেছে।
এ জন্য রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে। বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ বিএনপির সঙ্গে রাস্তায় নেমেছে স্বৈরাচার সরকারের পতনের জন্য। কিন্তু একটি প্রশ্ন সবার মনে আসছে। কেউ বলছে, আবার কেউ বলছে না।
সেটা হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় হলে বাংলাদেশের ভাগ্যের কী পরিবর্তন হবে? আমরা আবার আরেকটা ফ্যাসিস্ট সরকার দেখব না, তার গ্যারান্টি কী? মানুষ এটা জানতে চায়। মানুষের মনের সব প্রশ্নের উত্তর রূপরেখার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের জন্য, অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু রাষ্ট্র সে কথা রাখেনি। এই রাষ্ট্র এখন মানুষের সমস্ত মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। তাই এই সরকারকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বলে আমরা বেহস্তে আছি, বিরোধী মতের মানুষেরা বলে দোযখে বসবাস করছি। নিকৃষ্ট ফ্যাসিবাদী সরকার দেশ চলাচ্ছে। মিডিয়াসহ কারো স্বাধীনতা নেই। মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, দেশ আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পতন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১০ দফা সরকার হঠানোর দফা আর ২৭ দফা রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা। আজ দেশে সুশাসন নেই। সব কিছু আজ পাচার হয়ে গেছে। এ থেকে উদ্ধারের জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিকল্প নেই। আবুল হাশেম বক্কর বলেন, মাফিয়ার কাছ থেকে দেশ উদ্ধার করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আবু সুফিয়ান বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ধ্বংস করে করেছে ফেলেছে। তাই রাষ্ট্র মেরামতে ২৭ দফা রূপরেখার বিকল্প নাই।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি শিক্ষক অধ্যাপক এস এম নছরুল কদির, চমেক ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন, কৃষিবিদ অধ্যাপক আহসানুল হক, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক, ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, শিক্ষক নেতা এম এ ছাফা চৌধুরী, জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, ব্যবসায়ী নেতা জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, এডভোকেট জহুরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার ওসমান, এডভোকেট মুফিজুল হক, অধ্যাপক ডা. আব্বাস উদ্দীন, এডভোকেট কায়সার হামিদ।