ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটাতে বিএনপির আন্দোলনে দেশে জনমতের পাশাপাশি বিদেশিদেরও সমর্থন আছে বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন যে দানা বেঁধেছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার পতনের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে জনমত স্পষ্ট। বাংলাদেশের মানুষও মনস্থির করে ফেলেছে। এখন বিষয় হচ্ছে আমরা কীভাবে শেখ হাসিনার পতন ঘটাব সেটা আমাদেরকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। বিদেশিদের সমর্থন আছে, দেশেও সমর্থন আছে। কিন্তু ফয়সালা হবে রাজপথে। ফয়সালা হতে হবে রাস্তায়।
গতকাল মঙ্গলবার নগরের কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনলাইনে সংযুক্ত থেকে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ মেহমান হিসাবে অংশ নেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজিব রঞ্জন।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশিদ, সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
আমীর খসরু বলেন, সমপ্রতি দুটি সার্ভে রিপোর্ট পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। একটি সার্ভে হয়েছে, তারেক রহমান আগামী নির্বাচনের পর যে জাতীয় সরকারের কথা জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন সেটার পক্ষে কারা আর বিপক্ষে কারা, এ নিয়ে। নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য একটি জার্মান চ্যানেল এ সার্ভেটি করেছে। ২৫ হাজার মানুষ এতে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে ৮২ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই সঠিক।
ইকোনমিস্ট পত্রিকা দ্বিতীয় সার্ভে করেছে উল্লেখ করে খসরু বলেন, এ সার্ভে হয়েছে কেয়ারটেকার সরকারের পক্ষে কারা কারা আছে সেটা নিয়ে। অর্থাৎ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে আমাদের যে দাবি তার পক্ষে কারা আছেন। এতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভোট দিয়েছে কেয়ারটেকারের পক্ষে। সুতরাং জনমত বোঝার আর বাকি নেই। জনমত নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই। জনমত গঠিত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে চট্টগ্রামবাসী বারবার প্রমাণ করেছে, আমাদের নেতকর্মীরা সাহসের সাথে লড়েছে। এ সময় তিনি আগামীতেও সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, আগামী বছর যেন আমরা ক্ষমতায় এসে ইফতার করতে পারি সেটা আমাদের লক্ষ্য হতে হবে। জরিপ অনুযায়ী সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কর্মঠ নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। অতএব তার নেতৃত্বে বিএনপি আগামী দিন ক্ষমতায় যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নাই। আওয়ামী লীগ পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।
এস এম ফজলুল হক বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার গণতন্ত্রকে হরণ করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই দেশকে তারা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হলে মুক্ত হবে বাংলাদেশ। তাই আসুন আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণকে সাথে নিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করি।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। এই সরকারের অধীনে এখন সবকিছু ঊর্ধ্বগতি, নিয়ন্ত্রণহীন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া লালদীঘির ময়দানে বলেছিলেন, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও। ঠিক তেমনিভাবে সুদূর লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একই ডাক, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, সরকার দেশের সব গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে আওয়ামী অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করেছে। তাই এই রাষ্ট্রের সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক সংস্কার করার জন্য জাতীয় ঐক্যমতের মাধ্যমে জাতীয় সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, একরামুল করিম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মিয়া ভোলা, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, গাজী মো. সিরাজ উল্লাহ প্রমুখ।