বিএনপির আন্দোলনের গতি কমে গলার জোর বেড়ে গেছে

মোছলেম উদ্দিনের শোকসভায় কাদের ‘নাছির-নওফেলের তরুণ তুর্কীদের নিয়ে মাঝে মাঝে দুশ্চিন্তায় পড়ি’

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৫ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির গলায় যত জোর, আন্দোলনে তত গতি নেই। তাদের আন্দোলনের গতি কমে গেছে, গলার জোর বেড়ে গেছে।

তারা বলেছিল ১০ তারিখ দেশ দখল করবে, পরের দিন থেকে খালেদা জিয়া দেশ চালাবে। তারেক রহমান এয়ারপোর্টে আসবে। তারেক রহমানের ডাকে তাদের নেতাকর্মীরা হান্ডি, পাতিল, লোটাকম্বল নিয়ে সাতদিন ধরে এক এক সমাবেশের নামে পিকনিক করেছে। আন্দোলনের গতি কমিয়ে বিএনপি নিরব

পদযাত্রা করেছিল। তারা লাল কার্ড থেকে নীরব পদযাত্রার আয়োজন করেছে। আজ শুনলাম নিরব পদযাত্রা থেকে ‘নিরীহ মানববন্ধন’ করছে তারা। বিএনপি মূলত নির্বাচনকে ভয় পায়। তাই তারা নির্বাচনে আসতে চায় না। কেননা, নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ জিতবে।’

গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এ শোকসভার আয়োজন করেন।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে নাছির, নওফেল আছে। তাদের তরুণ তুর্কীদের নিয়ে আমরা মাঝে মাঝে দুশ্চিন্তায়

 

পড়ি। যখন পত্রপত্রিকায় দেখি দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি। এটা কেন হবে? আমরা একই দল করি, একই আদর্শের কর্মী। একদলের কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কেন? পত্রপত্রিকায় এসব দেখে আমরা লজ্জা পাই। তবে একটা কথা বলি, যে যত কথাই বলুক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপকর্মের বিরুদ্ধে জিরো

টলারেন্স। যারা অপরাধী তাদের শাস্তি দিচ্ছেন। আবরার হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরও শাস্তি হয়েছে। বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের শাস্তি হয়েছে। কেউ ছাড় পাননি। শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না।

ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেছে বেছে নিয়েছেন। আমার বিশ্বাস আমাদের যে কমিটি নেত্রী পছন্দ করেছেন তাদের হাত ধরে ছাত্রলীগের সুনাম ফিরে আসবে। যারা অনিয়ম করবে তাদের চিহ্নিত করা হবে। কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনোরকম অনিয়ম প্রধানমন্ত্রী ছাড় দেন না। দুর্নীতি করলে

আমাদের এমপিদেরও জেল হয়। কাজেই তরুণ তুর্কিরা তোমরা সাবধান হয়ে যাও। কেউ অপকর্ম করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।’

তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে বুঝতে পারছি দলীয় সাংগঠনিক ক্ষেত্রে কিছু বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। এমনকি হাইব্রিড ঢুকে গেছে। এদের কবল থেকে দলকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের সদ্য প্রয়াত জননেতা মোছলেম উদ্দীন আহমদ দলের মধ্যে ভিতরে ঢুকে পড়া হাইব্রিডদের নিয়ে ভাবতেন। আমি চাই এই হাইব্রিডদের কাছে দল কখনো যাতে আত্মসমর্পণ না করে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলে আমরা (আওয়ামী লীগ) লুট করছি, দুর্নীতি করছি। আরে হাওয়া ভবনে বসে লুটপাট কি আমরা করেছি। নাকি তারেক জিয়া করেছে। বিদেশে টাকা পাচার করেছে কারা? এই বিএনপি বর্গীর চেয়ে ভয়ঙ্কর। ওরা ক্ষমতায় গেলে পুরো দেশটাকে গিলে খাবে।

প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদের মতো নেতা হয় না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মোছলেম উদ্দিন দলের একজন নিবেদিত প্রাণ নেতা ছিলেন। মৃত্যুর তিন দিন আগে ঢাকার হাসপাতালে আমি দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেনআমি চট্টগ্রাম যাব, আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান

করব। আমাকে একটু সময় দিবেন। এমন নেতা সত্যিই হয় না। মোছলেম ভাই ত্যাগী নেতা, তার জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এ দেশে রাজনীতিকদের দুর্ভাগ্য, মৃত্যুর কিছুদিন পরে আমরা তাদের ভুলে যাই। আজকে আমরা মোছলেম উদ্দিনকে স্মরণ করছি এক সময় মোছলেম উদ্দিনও হারিয়ে

যাবে। তখন শুধুমাত্র ঐ রাজনৈতিক নেতা পরিবারের সন্তান হয়ে যাবে। আজকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে জাবেদ মন্ত্রী আছে বলেই বাবু ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী বড় করে হচ্ছে। আজকে নওফেল উপমন্ত্রী আছে বলেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী ভালোভাবে হচ্ছে।

গ্রুপিং রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে দেবে, হাওয়া ভবনের লুটপাট ভুলে গেছেন? এরা ক্ষমতায় গেলে লুটপাট করবে। আপনারা শুধু ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।

শোকসভায় অতিথিদের মঞ্চে খাবার সরবরাহ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমি দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলিএখনে একটি বিষয় আমার খুব খারাপ লেগেছে। শোকসভায় শোকের আবহ বজায় রাখবেন। এটা শোকসভা। এখানে টেবিলে অতিথির সামনে খাবার এনে দেয়া হয়েছে এটা বিশ্রি দেখায়। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের হতে হবে আর্দশ শিক্ষক।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ আ. লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

প্রধান বক্তা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, মোছলেম উদ্দিন হঠাৎ করে মারা গেল। সিরিয়াল ছিল আমার। সিরিয়াল ভঙ্গ করে মোছলেম উদ্দিন চলে গেল। পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী আসবেন, এই জনসভাকে সফল করার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে না গিয়ে জনসভাকে সফল করার জন্য অক্লান্ত

পরিশ্রম করেছেন। ঐ সময় তার ক্যান্সারের জন্য ক্যামো দেয়ার কথা ছিল। সেটা দিতে পারেননি। তার যে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন তা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে যুবলীগ তারপর আওয়ামী লীগ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এক সাথে দীর্ঘকাল আমরা রাজপথে ছিলাম।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিনসহ দিনের পর দিন আমরা রাজপথে ছিলাম। লড়াইসংগ্রাম করেছি। তার দীর্ঘদিনের আশা ছিল সংসদ সদস্য হবেন। আল্লাহ তার সেই আশা পুরণ করেছেন।

বিশেষ অতিথি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, মোছলেম চাচা রাজনীতি ছাড়া জীবনে কিছুই বুঝতেন না। মোছলেম চাচার সাথে আমার অনেক স্মৃতি। আমার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে তিনি দীর্ঘ জীবন রাজপথে ছায়ার মতো ছিলেন। একসাথে রাজনীতি করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দলের জন্য কাজ করে গেছেন।

জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি বলেন, মোছলেম ভাই আমাদের দক্ষিণ জেলার আওয়ামী পরিবারের মুরুব্বি ছিলেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি দল এবং দলের নেতাকর্মীদের ভালোবাসতেন। তিনি রাজনীতি ছাড়া কিছু বুঝতেন না।

আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, মোছলেম ভাইকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। মোছলেম ভাই ছিলেন বিশাল সিংহ হৃদয়ের অধিকারী। সাগরের মতো উদার হৃদয়ের নেতা। তিনি সবাইকে আাপন করে নিতেন। মোছলেম ভাইয়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন থেকে অনকে কিছু শেখার আছে। তাঁর মধ্যে কখনো অহংকার বোধ ছিল না।

ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, মোছলেম ভাই আপাদমস্তক রাজনীতির মানুষ ছিলেন। তিনি ৬০’ এর দশক থেকে রাজনীতি যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ যুবলীগ করেছেন। তিন দশকের বেশি সময় ধরে জেলা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় শোকসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আ. লীগের অর্থ পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, . আবু রেজা মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন নদভী এমপি, উত্তর জেলা আ. লীগের

সভাপতি এম এ সালাম, দক্ষিণ জেলা আ. লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, উত্তর জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মোছলেম উদ্দিন আহমদের ছোট ভাই

আবসার উদ্দিন সেলিম, মহানগর আ. লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নগর আ. লীগের সহ সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ, উত্তর জেলা আ. লীগের সহসভাপতি ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলা আ. লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী।

সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, মহাগর আ. লীগের সহ সভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, উত্তর জেলা আ. লীগের সহ সভাপতি আবুল কাশেম চিশতী, নগর আ. লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, প্রায়ত মোছলেম উদ্দিন আহমদের মেয়ে কাজী শারমিন ইয়াসমিন প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভিড়ের চাপে দরজার কাচ ভেঙে পড়ল নাছিরের মাথায়
পরবর্তী নিবন্ধলোহার টুকরো আধ কিমি দূরে গিয়ে প্রাণ নিল শ্রমিকের